সাভারে প্রকাশ্যে মাথায় গুলি করে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মেহেদী অস্ত্রসহ গ্রেফতার

রোমান হোসেন, সাভার : সাভারে প্রকাশ্যে মাথায় গুলি করে রংমিস্ত্রি শাহীন হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মেহেদী হাসানকে ৭২ ঘণ্টায় মধ্যে একটি বিদেশী রিভালবার ১৭রাউন্ড বুলেট সহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২মে) রাত সাড়ে১০টার সময় র‍্যাবে -৪ অভিযানিক দল মেহেদি হাসানকে(৬৪)টঙ্গীর গাছা থানা তারগাছ এলাকা থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ।

এব্যাপারে সিপিসি-২, র‍্যাব-৪ এর উপ-পরিচালক  মেজর জালিস মাহমুদ খাঁন বলেন, গোপন সংবাদ ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে টঙ্গী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার সময় আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন পৌর ব্যাংক কলোনী মহল্লায় বিএনপি’র সাবেক এমপি সালাউদ্দিন বাবুর বাড়ির সামনে এমপির ঢাল নামক জায়গায় নিজ কর্মস্থল কামনা গ্যারেজের সামনে রংমিস্ত্রি শাহীনকে (২৮) প্রকাশ্যে মাথায় গুলি করে হত্যা করে।

এঘটনায় নিহতের স্ত্রী মারিয়া আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, মেহেদীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে আজ দুপুরে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করলে পাশাপাশি ছায়াতদন্ত শুরু করে র‍্যাব-৪।
ঘটনার পরপর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সাদা গেঞ্জি পরিহিত এক ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত গতিতে হেঁটে পালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, ওই ব্যক্তি মেহেদী হাসান। যিনি হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী।

টঙ্গী গাছা থানা অভিযান চালিয়ে মেহেদীকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বিদেশী রিভলবার ও ১৭রাউন্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে।

একটি সূত্র দাবি করেছে, কামনা গ্যারেজের মালিক বরুণ একজন মাদকাসক্ত। গ্যারেজে নিয়মিত জুয়ার আসর বসত । মেহেদী ওই রাতে কামনা গ্যারেজে মদ্যপান করে এবং জুয়ার আসরে বসেন। গ্যারেজ কর্মচারী শাহীনকে নেশা জাতীয় কিছু একটা আনতে বললে সে রাজি হয়নি বলেই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন মেহেদী। মধ্যপ অবস্থায় মেহেদী তাকে গুলি করে হত্যা করে। পরে তিনি টঙ্গী পালিয়ে যান। সেখানে তার এক ভাইয়ের বাসায় ওঠে ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এর আগেও ১৯৯২ সালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন রেডিও কলোনি বাস স্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী একটি মাঠে হাউজি খেলা চলাকালীন সময়ে আব্দুর রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে খেলার সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে ক্ষমতা আর কৌশলে মামলার আপোষ করে হত্যার দায় থেকে মুক্তি পান মেহেদী। তখন থেকেই তিনি অস্ত্র ব্যবহার করে আসছেন বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার মেহেদী হাসানের ভাই জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার ভাই মেহেদী হাসানকে টঙ্গীর তারগাছ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আমার ভাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কি না জানি না। তবে তাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার ভাই বাংলাদেশ চলচিত্র সমিতির সদস্য ও দৈনিক আল মোজাদ্দেদ প্রত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। এছাড়া তিনি সাভার প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।

পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, মেহেদীর কাছে লাইসেন্স করা অস্ত্র ছাড়াও অবৈধ অস্ত্র রয়েছে । ঢাকার পণ্টনে তার শশুরের অস্ত্রের ব্যবসা রয়েছে বর্তমানে তার প্রথম স্ত্রীর বড় ভাই সেই ব্যবসা পরিচালনা করে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যু হলে সন্তানদের নিয়ে পৌর ৩নংওয়ার্ড পাঁচদাগ এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকতেন তিনি। তার বাবার নাম নাসির উদ্দিন । তাদের পূর্বের বাড়ি সাভার পৌর ঘোষপাড়া এলাকায় । বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডিপজলের সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন ছিল তার এই উশৃঙ্খল কর্মকান্ডের কারণে ডিপজল ও তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। তার সাথে থাকার সুবাদে মেহেদী হাসান একাধিক চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *