অর্থনীতিতে স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বর্তমান সরকার

নিউজ ডেক্স: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো এবং সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজিএস বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিতে যে স্বচ্ছতার উদ্যোগ নিয়েছে, তা ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর জন্য শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

রাজধানীর সিপিডি সেন্টারে গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শ্বেতপত্র খসড়া কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক কাঠামোতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই সরকার প্রমাণভিত্তিক স্বচ্ছতার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি সরকারের মৌলিক অবদান হিসেবে বিবেচিত হবে।

শ্বেতপত্রে উন্মোচিত অর্থনৈতিক চিত্র
ড. দেবপ্রিয় উল্লেখ করেন, শ্বেতপত্র প্রকাশের পর সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, বর্তমান সরকার একটি নীতিগতভাবে চ্যালেঞ্জপূর্ণ এবং কাঠামোগত দুর্বল অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। এ শ্বেতপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় দশকে সরকারি তহবিলের লুণ্ঠনের পরিমাণ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, “শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে যে, পূর্ববর্তী সরকারের সময় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো—রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের সমন্বয়ে—দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুঁজিবাদী চক্র থেকে লুণ্ঠনতন্ত্রে পরিণত করেছিল।” নিউইয়র্ক টাইমস ও দ্য ইকোনমিস্টের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এই দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেছে।

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকার
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল অর্থনীতির সামষ্টিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এজন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা দেখছি যে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা আরও বাজারভিত্তিক হওয়ায় ওঠানামা হতে পারে, তবে বড় ধাক্কা আসার আশঙ্কা নেই।

মূল্যস্ফীতি ও সংস্কার প্রয়োজনীয়তা
তিনি আরও বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাজারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের সুফল এখনও সুস্পষ্ট নয়। সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

ড. দেবপ্রিয় উল্লেখ করেন, “সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলো দূর করতে প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রক সংস্কার প্রয়োজন। এ ধরনের সংস্কারের সাফল্য দেশের টেকসই উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত স্বচ্ছতার ধারা ভবিষ্যৎ সরকারগুলোকে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত রাখবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।