নিজস্ব প্রতিনিধি : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি জানি না কেন বা কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এ কথা বলেছেন; অথবা তিনি এর অর্থ বুঝতে পেরেছেন কিনা। এটি একটি বিপজ্জনক বিবৃতি। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না।রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে খাটো করার চেষ্টা করছে- তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল আহ্বান জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি জানি না কেন বা কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এ কথা বলেছেন; অথবা তিনি এর অর্থ বুঝতে পেরেছেন কিনা। এটি একটি বিপজ্জনক বিবৃতি। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি মনে করি, তার মন্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত। দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না।
তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ ছাত্র, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো সবাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন একটি পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে যেখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং জনগণের সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, এর আগে বুধবার তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের চেয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
সচিবালয়ে ব্রিটিশ গ্লোবাল পার্টনার্স গভর্নেন্সের (জিপিজি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে উপদেষ্টা আরও বলেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে।
সবচাইতে কঠিন সময়
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই সময়টা সবচাইতে কঠিন সময়। আপনার একটা পদক্ষেপ যদি ভুল হয় আপনি পেছনে পড়ে যাবেন, খাদে পড়ে যাবেন। যদি সঠিক পা দিতে পারেন তাহলে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এই আয়োজনে তিনি বলেন, ‘আমার অনুরোধ থাকবে, এই দিবসগুলো আপনারা অবহেলা করবেন না, জানার চেষ্টা করবেন। অনেক জানেই না কী হয়েছিল। আমাদের দেশের সবচেয়ে বরেণ্য ব্যক্তিদেরকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ভালো শিক্ষকদেরকে হায়েনারা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো।
‘এই যে ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে তুলে নিয়ে যেত, আমাদের গুম করে নিত। ঠিক ওইভাবে তাদের (শহীদ বুদ্ধিজীবীদের) তুলে নিয়ে গেছে। তারা আর ফিরে আসেননি, তাদের হাত-পা বাঁধা মরদেহ পাওয়া গেছে রায়েরবাজারে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে বুদ্ধিজীবীদের কেন প্রাণটা দিতে হলো।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিটি মুহূর্ত এখন আমাদেরকে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। আমরা এমন কোনো কথা বলব না যা আমাদের এই বিজয়কে নষ্ট করে দেয়, অর্জনকে বিনষ্ট করে দেয়।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভারতে আশ্রয় নিয়ে তিনি দ্রুত কাজ করছেন। তিনি লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এর মধ্যে ডিজিটালি একটা মিটিংও করেছেন।
‘দেখবেন, তারা (আওয়ামী লীগ) অনেক অপপ্রচার করছে, মিথ্যাচার করছে- যেগুলো বাংলাদেশের জন্য, এই বিপ্লবের জন্য অত্যন্ত উল্টো কথা। তাই আপনাদেরকে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগণের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভেতর দিয়ে জবাব দিতে হবে।’
ফেসবুক, টুইটার সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের মিথ্যাচার-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।