ভারতের জনগণের উদ্দেশে ১৪৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির আহ্বান

অনলাইন ডেক্স: ‘ভারতের জনগণের কাছে আমাদের আবেদন’ শিরোনামে একটি বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের ১৪৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা সাম্প্রদায়িকতা এবং উসকানির বিরুদ্ধে দুই দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সাধারণ জনগণের জীবনের সংকট বিচার করলে দুই দেশের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের দেশে যেমন সাম্প্রদায়িক প্রবণতা ও শাসকের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, আপনাদেরও একইভাবে নিজের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করে এবং ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ বাড়ায়। এটি শাসকগোষ্ঠীর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, যা জনগণের বাস্তব সমস্যাগুলো আড়াল করার একটি কৌশল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে চাপা দিতে সাম্প্রদায়িক উসকানি কাজে লাগানো হয়।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সংকট
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। কিছু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দুই দেশের জনগণের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তবে ভারতের জনগণ ও সরকারকে একই হিসেবে না দেখার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, “আমরা জানি, ভারতের জনগণও হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে লড়াই করেছি, তার সঙ্গে আপনারা সংহতি প্রকাশ করেছেন। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনাদের এবং আপনাদের আন্দোলনে আমাদের সংহতির এই ধারা দীর্ঘ দিনের।”

সাম্প্রতিক ঘটনা ও সমালোচনা
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, মন্দির ভাঙচুর এবং জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। তবে গণ-অভ্যুত্থানের সময় অনেক রাজনৈতিক দল হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছে। একই সময়ে ভারতের গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে বলা হয়, তারা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য প্রকাশ করেনি এবং মিথ্যা প্রচারণা সাম্প্রদায়িক উসকানি বাড়িয়েছে।

বিশেষ করে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়, “ভারত সরকার এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেও মিথ্যা প্রচারণা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনা সঠিকভাবে তুলে ধরা হোক।”

হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভূমিকা ও সংহতি
বিবৃতিতে বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ভূমিকার প্রশংসা করা হয়। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানেও হিন্দু জনগণের অনেকে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন।”

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, লেখক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, তুহিন ওয়াদুদ, মানবাধিকার কর্মী মোশরেফা মিশু, নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আলতাফ পারভেজ, কামার আহমাদ সাইমন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, এবং আরও অনেকে।

বিবৃতি শেষ হয়েছে দুই দেশের জনগণের ঐক্য এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবিচল থাকার আহ্বানে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।