অনলাইন ডেক্স: বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের তাগিদ রয়েছে, তবে চীনের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সেখানে বিয়ে ও জন্মহার এতটাই কমে গেছে যে, তরুণদের বিয়েতে আগ্রহ বাড়াতে সরকার নগদ প্রণোদনা, অতিরিক্ত ছুটি ও নানা সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করছে। তবুও, বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের হার বাড়ানো নিয়ে কর্তৃপক্ষের চিন্তা কমছে না।
এবার চীনের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রেম’ এবং ‘বিয়ে’ বিষয়ক কোর্স চালু করার প্রস্তাব উঠেছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিয়ে, প্রেম, উর্বরতা এবং পরিবার প্রতিষ্ঠার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে ২০২৩ সালে টানা দ্বিতীয় বছর জনসংখ্যা কমেছে, যা এই উদ্যোগের পেছনের মূল কারণ। ১ নভেম্বর চীনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটির মোট জনসংখ্যা ১.৪ বিলিয়ন (১৪০ কোটি)। তবে দেশটির বয়স্ক জনগণের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা অর্থনীতি ও সরকারি ব্যয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৪৭ লাখ ৪৭ হাজার দম্পতি বিয়ে নিবন্ধন করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ লাখ ৪৩ হাজার কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থিক অনিশ্চয়তা, জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি এবং ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তরুণদের উদ্বেগই তাদের বিয়েতে অনাগ্রহী করে তুলছে।
এছাড়া চীনের সোশ্যাল মিডিয়াতে বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার বিষয়টি এখন একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। একদিকে, দেশটিতে আইনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে বিয়ের প্রক্রিয়া সহজ করার এবং বিচ্ছেদকে কঠিন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে, তরুণদের মধ্যে বিয়ে ও সম্পর্ক নিয়ে মানসিক বোঝাপড়ার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চায়না পপুলেশন নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, চীনের ৫৭ শতাংশ তরুণই প্রেমে পড়তে আগ্রহী নয়, কারণ তারা জানেন না কীভাবে একসাথে পড়াশোনা এবং প্রেমের মধ্যে ভারসাম্য রাখা যায়। এর ফলে সম্পর্কের ওপর শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে।
পপুলেশন নিউজের তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি মোকাবিলায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘প্রেম ও বিয়ে’ বিষয়ক কোর্স চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা ‘স্বাস্থ্যকর ও ইতিবাচক’ পরিবার ও সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
চীনের নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, তরুণদের মনোভাব পরিবর্তনে এসব প্রণোদনার কতটা সফলতা আসবে, তা এখনই বলা মুশকিল।