অনলাইন ডেস্ক: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তে জাতিসংঘ এখন সরাসরি যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাতিসংঘের এক প্রাথমিক কারিগরি দল আজ বৃহস্পতিবার এক সপ্তাহের সফরে ঢাকায় আসছে।
বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, জাতিসংঘের এই দলটি প্রাথমিকভাবে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে। তবে তাদের সফরকাল আরও বাড়তে পারে। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে কীভাবে সহযোগিতা করা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা।
জেনেভা থেকে পাওয়া কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘ যখন বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সেই সময়ে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার তদন্ত করতে যাচ্ছে, তখন কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বিষয়টি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচ্যসূচিতে তোলার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর চাপ দিচ্ছে। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ যখন উদারভাবে জাতিসংঘকে এই তদন্তে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন মানবাধিকার পরিষদের আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি তোলা সমীচীন নয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগ করেছে।
কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশে আসছেন। ঢাকায় এসে তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং কাজের ধারা, প্রক্রিয়া, শর্তসহ সব বিষয় চূড়ান্ত করবেন।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, জাতিসংঘের দলটি সরকারি কর্তৃপক্ষ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবে। তবে এটি জাতিসংঘের মূল তথ্যানুসন্ধানী দল কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই প্রাথমিক দলটি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রয়োজন এবং জাতিসংঘের দলটির বাংলাদেশে কাজ করতে গেলে কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে, জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলটি স্বাধীনভাবে তাদের অর্থায়নে কাজ করবে বলে জানা গেছে। তবে জেনেভা থেকে প্রাপ্ত এক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘের দলটি কারিগরি সহায়তা দিতে পারে কিনা, সে বিষয়ে একটি প্রস্তাবও এসেছে। তবে বাংলাদেশ চায়, জাতিসংঘের দলটি প্রথমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুক এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাক।
জেনেভা থেকে কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশকে মানবাধিকার পরিষদের আলোচ্য সূচিতে যুক্ত করতে চাচ্ছে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তবে বাংলাদেশ যখন জাতিসংঘকে সরাসরি যুক্ত করছে, তখন এ ধরনের প্রচেষ্টা সমীচীন নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।