এম এস আই জুয়েল পাঠান ঃগাজীপুরের কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানোর একদিন পর তিন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ওই তিন কর্মকর্তাকে দুই দিনের ব্যবধানে দুবার বদলি করা হয়। এমনকি বদলির আদেশের পরদিনই তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। –
বদলি হওয়া তিন কর্মকর্তা হলেন বিসিক ঢাকা কার্যালয়ের উন্নয়ন বিভাগের উপব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান আল ফারুক, তাকে দুই আদেশেই কিশোরগঞ্জ জেলায় সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে বদলি করা হয়। আরেকজন হলেন বিসিক গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল পারভেজ। তাকে প্রথমে নোয়াখালী জেলায় সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। পরের আদেশে রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। এ ছাড়া বিসিক ঢাকার পুরকৌশল বিভাগের টেকনিক্যাল কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান সিজুকে প্রথম আদেশে বিসিক শিল্পনগরী ল²ীপুরের টেকনিক্যাল কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। পরের আদেশ তাকে খাগড়াছড়ি বিসিক শিল্পনগরীর কারিগরি কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। এ ধরনের বদলি আদেশকে নজিরবিহীন বলে বলছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।
জানা গেছে, কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীর অভ্যন্তরে একটি প্লটের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে বিপাকে পড়েছেন এই তিন কর্মকর্তা। ১৯ অক্টোবর তারা অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এর এক দিন পর গত ২১ অক্টোবর তাদের প্রথমে বদলি আদেশ জারি করা হয়। পরের দিন ২২ অক্টোবর আরেক আদেশে তাদের আবার বদলি করা হয়। দুটি আদেশে স্বাক্ষর করেন করেছেন বিসিকের পরিচালক (প্রশাসন-যুগ্মসচিব) শ্যামলী নবী।
সর্বশেষ আদেশে বদলি কর্মকর্তাদের ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যর্থতায় ২৪ অক্টোবর থেকে তারা তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ডরিলিজ) হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
বদলি আদেশ পাওয়া কর্মকর্তা মো. কামাল পারভেজ বলেন, ‘নাছিমা আক্তার চৌধুরী নামের এক উদ্যোক্তা মেসার্স নাছিমা ফুড প্রোডাক্টসের নামে কোনবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীতে খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য গত ২০০০ সালের ২৩ এপ্রিল ১ হাজার ৬১০ বর্গফুটের একটি প্লট (প্লট নম্বর এস ৬৫) বরাদ্দ পান। তিনি বিসিকের নিয়ম ভেঙে প্লটটি অন্যদের কাছে ভাড়া দেন। সেখানে সেমিপাকা টিনশেড স্থাপনা তৈরি করে একটি নিটিং ইন্ডাস্ট্রি ও একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ তৈরি করা হয়। ১৯ অক্টোবর ওই জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করার কারণেই আমাদের বদলি করা হয়েছে।
জানা গেছে, অবৈধভাবে দখলকারী নাছিমা ফুডের নাসিমা বেগম ২০২৩ সালে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিসিক উপব্যবস্থাপক নজরুল ইসলামকে বরিশাল এবং শিল্পনগরী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান রাসেলকে গোপালগঞ্জ ট্রান্সফার করেছিলেন। এবারও একই কায়দায় স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিসিকের সরকারি জায়গা দখল করে রাখা ও উচ্চ পর্যায়ে ম্যানেজ করে তিনজনকে একদিনের নোটিশে স্থানান্তর করে দিয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য সরকারি জায়গাটি ২০০০ সাল থেকে দখলে রেখে ভোগ করছেন নাছিমা আক্তার। ২০১৭ সালে এই প্লট নং এস-৬৫ (অংশ) ৫৪ তম জেলা বরাদ্দ কমিটির (এলএসি) সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজাউল এ্যাপারেলস(প্রাঃ)লিমিটেডকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ২০২১ সালে সরেজমিনে ডিসি মহোয়ের পরিদর্শন ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে ৫৭তম এলএসি সভায় পজেশন প্রদান বিষয়ে এবং ২০২৩ সালে ৫৮তম এলএসি সভায় স্থাপনা অপসারণের জন্য ৭ দিনের নোটিশে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করে উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করা হয়। অতঃপর নাছিমা আক্তার এর আপত্তি ও আপিল করেন বিসিক চেয়ারম্যান দপ্তরে। বিসিক চেয়ারম্যান মহোদয়ের দপ্তরের শুনানি ও সরেজমিনে পরিদর্শন করে ডিসি অফিসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একই রিপোর্ট প্রদান করেন। পরবর্তীতে সেখানেও আপত্তি দিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের শিল্প সচিব বরাবর আবেদন করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপসচিব জনাব শামিম সুলতানার সুপারিশে পুনরায় নাসিমা আক্তারকে না দিয়ে রেজাউল এ্যাপারেলসকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। সেখানেও আপত্তি দিয়ে শিল্প উপদেষ্টার দপ্তরে পুনঃতদন্ত চেয়ে নিজেই স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে ইটের গাঁথুনি দিয়ে ওয়াল নির্মানের কাজ করতে চেষ্টা করেন। বিসিকের থানায় অভিযোগ ও বাঁধা প্রদানে ৪ অক্টোবর কাজ করতে বিরত থাকলেও তদন্তের নির্ধারিত তারিখ বিগত ১৯ অক্টোবর ২০২৪ শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কর্মকর্তা যুগ্মসচিব জনাব জাকির হোসেন ও বিসিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জায়গাটি টিনের বেড়া ফাঁকা করে সরেজমিনে পরিমাপ করে বিসিকের সুনির্দিষ্ট জায়গা বুঝতে গিয়ে মাননীয় শিল্প উপদেষ্টা জনাব আদিলুর রহমানের প্রভাব খাটিয়ে বিসিকের তিন কর্মকর্তার দুই দফায় বদলি ও নতুন কর্মস্থলে একদিনের মধ্যে যোগদানের আদেশের দৌরাত্ম্য দেখিয়ে দিয়েছে এই নাছিমা আক্তার।