অভ্যুত্থানে সব শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে: ড. ইউনূস

বিশেষ প্রতিবেদন : প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় বাংলাদেশ সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। এসময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও তার কারণ ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু এসব ঘটনাকে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হয়েছে। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।গণ-অভ্যুত্থানে সব শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, নিহত-আহত সবার তথ্য সরকারের কাছে আছে। একজনও বাদ যাবে না। সব আহত শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ও সরকার বহন করবে।

রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আহতদের দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহিদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি শহিদ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে।

‘যারা বুলেটের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য নেপাল থেকে কর্নিয়া আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের প্রয়োজন তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের কোনো শহিদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-শ্রমিক চিকিৎসা সেবা ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা থেকে বাদ যাবে না। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকার।’

তিনি জানান, গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে গঠিত ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ বেশ পাকাপোক্তভাবে কাজ শুরু করেছে। এই ফাউন্ডেশনে সরকার একশ’ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।

এছাড়াও জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহিদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বরাদ্দ প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

পতিত স্বৈরাচার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাধ্য হয়ে তাদের অনেকেই গণহত্যায় অংশ নিয়েছেন। খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা জনরোষের শিকার হয়েছেন। এতে তাদের মনোবল অনেক কমে যায়।

‘আমরা পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে এনে তাদের আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে দৃশ্যমান অনেক উন্নতিও হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও কিছু নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতিতে সহায়তা করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময় বাংলাদেশ সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। এসময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তারা সহিংসতারও শিকার হয়েছেন। কিন্তু এটা নিয়ে যেসব প্রচার-প্রচারণা হয়েছে তা ছিল সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত।

‘যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু এসব ঘটনাকে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হয়েছে। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।’

অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ধৈর্য্যের পরিচয় দেয়ায় দেশের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘তারা তাদের কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিশোধ স্পৃহায় লিপ্ত হয়ে কেউ যাতে হানাহানিতে জড়িয়ে না পড়ে সেই আহ্বান জানিয়েছেন। আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কেউ হানাহানিতে লিপ্ত হননি।

‘ফ্যাসিবাদী শক্তি ভয় দেখিয়েছিল যে তারা ক্ষমতা ছাড়লে দেশে লাখ লাখ লোক মারা পড়বে। বাস্তবতা হলো, টানা সাত দিন পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকার পরও ব্যাপক আকারে সহিংসতা এড়ানো গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *