কাবা ঘরের ভিতরে কি আছে: এক পবিত্র অভ্যন্তরের রহস্য

কাবা ঘর, ইসলামের পবিত্রতম স্থান হিসেবে পরিচিত, এবং মুসলমানদের কিবলা হিসেবে সম্মানিত। প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায়ের সময় মুসলিমরা কাবার দিকে মুখ করে থাকেন। হজ এবং ওমরাহ পালনের সময় মুসলিমরা তাওয়াফ করেন, যা কাবা ঘরের চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ করা। কিন্তু কাবা ঘরের ভেতরে কী আছে, তা নিয়ে অনেকের কৌতূহল। এই প্রবন্ধে আমরা কাবা ঘরের ভিতরের বিশেষত্ব এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানব।

কাবা ঘরের অভ্যন্তর

কাঠামো ও স্থাপনা

কাবা ঘরের ভেতরের অংশটি দেখতে সাধারণ একটি কক্ষের মতো হলেও এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম। কাবার অভ্যন্তরীণ অংশটি বেশ খালি এবং সরল। এটি একটি চারকোণা কক্ষ যা প্রায় ১৩ মিটার (৪৩ ফুট) উঁচু এবং প্রতিটি দিক প্রায় ১০ থেকে ১২ মিটার (৩৩ থেকে ৩৯ ফুট) লম্বা।

পিলার

কাবার ভিতরে তিনটি পিলার বা স্তম্ভ রয়েছে। এই পিলারগুলি কাবার ছাদকে ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। কাবার ছাদও কাঠের তৈরি এবং উপরের অংশটি সোনা দিয়ে মোড়ানো।

মেঝে

কাবার মেঝে মার্বেল ও চুনাপাথরের মিশ্রণে তৈরি। মেঝের মাঝখানে একটি লাল কাপড় বিছানো থাকে, যা বিশেষ প্রার্থনা ও দোয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

সিলিং ও দেয়াল

কাবার অভ্যন্তরের দেয়ালগুলি সোনা ও রূপার পাত দিয়ে মোড়ানো এবং এতে কুরআনের আয়াত খোদাই করা রয়েছে। ছাদে সোনার কারুকাজ রয়েছে, যা অভ্যন্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

দরজা ও সিঁড়ি

কাবার একমাত্র দরজা পূর্বদিকে অবস্থিত এবং এটি প্রায় ২ মিটার (৬.৫ ফুট) উঁচুতে স্থাপন করা। অভ্যন্তরে ঢোকার জন্য একটি সোনার তৈরি সিঁড়ি ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণত বিশেষ অনুষ্ঠান এবং মেরামতের কাজে ব্যবহার করা হয়।

অন্যান্য উপাদান

কাবার অভ্যন্তরে একটি পাথরের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা “হাতিম” নামে পরিচিত। এটি কাবার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি বাইরের অংশে অবস্থিত।

কাবা ঘরের বিশেষত্ব ও গুরুত্ব

কাবা ঘরের ভেতরের অংশটি সাধারণ মানুষদের জন্য উন্মুক্ত নয়। শুধুমাত্র বিশেষ অতিথি, মুসলিম দেশের নেতৃবৃন্দ এবং কাবার রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেন। কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সময় বিশেষ প্রার্থনা ও দোয়া করা হয়।

ইতিহাস ও সংস্কার

কাবা ঘরের অভ্যন্তরের আয়োজন ও স্থাপনা কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার ১৯৯৬ সালে করা হয়, যখন কাবার ছাদ, দেয়াল ও মেঝে পুনর্নির্মাণ করা হয়।

উপসংহার

কাবা ঘরের ভিতরের অংশটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র স্থান। যদিও এর অভ্যন্তরে সাধারণত প্রবেশ করা যায় না, তবে এর সাদামাটা সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব মুসলিমদের জন্য অপরিসীম। কাবার অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও স্থাপনা মুসলিম ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের প্রতীক, যা প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *