জেলা প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ জেলা দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। কিন্তু কৃষক হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরও সঠিক মূল্য পান না। উৎপাদন পর্যায়ে ২৮ টাকা কেজির আলু খুচরা বাজারে পৌঁছাচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, ফলে লাভের বড় অংশ যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।
কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জে গত মৌসুমে বৃষ্টির কারণে দুই দফায় আলু লাগাতে হয়। এতে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ১৫-১৬ টাকা। কৃষকরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে আলু বিক্রি করেছেন ২৮ টাকা কেজিতে, যার ফলে ৫০ কেজির একটি বস্তার দাম হয় ১ হাজার ৪০০ টাকা। এরপর, হিমাগারের খরচসহ অন্যান্য কারণে আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। হিমাগারে ২৮ টাকার আলু হয়ে যায় ৪০ টাকা। পরে, বাজারে আসার পর কেজিতে আরও ২ থেকে ৪ টাকা বাড়ে, ফলে এক বস্তার দাম ২ হাজার ২০০ টাকায় পৌঁছায়। পাইকাররা সেটি ২ হাজার ৬০০ টাকা বস্তায় বা ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন, এবং খুচরা বাজারে এসে আলুর দাম পৌঁছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। ফলে, ৫০ কেজির একটি বস্তার দাম হয়ে যায় ৩ হাজার টাকা।
কৃষকরা জানান, কিছু বছর লোকসানের পর এ বছর তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। উৎপাদিত আলু বিক্রি না করে অনেক কৃষক বাড়িতে সংরক্ষণ করেছেন, আর কিছু হিমাগারে রেখেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার মুন্সীগঞ্জে ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টন।
সবজি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, বর্তমানে খুচরা বাজারে আলুর দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। লাল আলু ৬০ টাকা এবং সাদা আলু ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে আলু ৪৭ টাকা কেজি দরে কিনে ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বন্যার অজুহাত তুলে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দোষারোপ করছেন।
আলু ব্যবসায়ী খোকন পোদ্দার বলেন, তিনি কৃষকের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকার আলু ১ হাজার ৪০০ টাকা করে বস্তায় কিনেছেন, যার কেজিপ্রতি দাম পড়ে ২৮ টাকা। পরে, ১৭শ-১৮শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। একাধিক হাত বদলের কারণে খুচরা বাজারে আলুর দাম বেড়ে যায়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাসেদ মোল্লা বলেন, তাদের কাছে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা আলু ৩৫ টাকা কেজি দরে, যা কোল্ড স্টোরেজের খরচ দিয়ে ৪০ টাকা হয়। তবে কোল্ড স্টোরেজ থেকে পাইকারিতে আলু ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। পরিবহনের খরচ ১ টাকা হলেও বাজারে ১০-১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার দুলাল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আলুর কেজিতে প্রতি হাত বদলে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বাড়ছে, যা খুচরা বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে করা সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, এ বছর কম সংরক্ষণ হওয়া সত্ত্বেও কোল্ড স্টোরেজে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন আলু রয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু ৪৫-৪৬ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং আশা করা হচ্ছে যে বর্তমানে আলুর দাম আর বাড়বে না।