বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তাদের কাছে না দেওয়ার কারণে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিকবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে।
রোববার (১১ আগস্ট) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি আমেরিকাকে তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য দায়ী করেছেন। দেশত্যাগ করার আগে দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে দেওয়ার পরিকল্পনা করা একটি বক্তব্যেও তিনি এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
শেখ হাসিনা আরও জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একক আধিপত্য কায়েমের জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রকে না দেওয়ার কারণে তাকে এ মূল্য দিতে হয়েছে। তিনি বাংলাদেশিদের সতর্ক করেছেন যে, মৌলবাদীদের প্রভাব যেন দেশের ওপর না পড়ে।
তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, একদিন আবার নিজ দেশে ফিরে আসবেন এবং তার দল আওয়ামী লীগ পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে। আওয়ামী লীগের বহু নেতার ওপর অত্যাচার ও তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করার ঘটনায় তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা মনে করেন যে, মার্কিন সহকারী সচিব ডোনাল্ড লুর গত মে মাসে ঢাকা সফরের সঙ্গে এই ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। তাদের দাবি, লু চীনবিরোধী কিছু পদক্ষেপ নিতে হাসিনার ওপর চাপ দিচ্ছিলেন।
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের হিন্দন বিমানঘাঁটির কাছে একটি গোপন আস্তানায় অবস্থান করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ভারতে থাকতে হতে পারে। যদিও ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আইনি সুবিধা না থাকায় তিনি ভিসার মাধ্যমে নয়াদিল্লিতে থাকবেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টকে দেওয়া এক বার্তায় শেখ হাসিনা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি শিগগিরই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। তিনি বলেন, “পরাজয় আমার, কিন্তু জয়ী হয়েছে বাংলাদেশের জনগণ।” তিনি আরও বলেন, “আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। আপনারা যখন আমাকে চাননি, তখন আমি পদত্যাগ করেছি। আওয়ামী লীগ বারবারই উঠে দাঁড়িয়েছে, এবারও দাঁড়াবে।”
শেখ হাসিনা আবারও দাবি করেছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলেননি এবং তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি তরুণ শিক্ষার্থীদের বলছি, আমি তোমাদের রাজাকার বলিনি। একটি পক্ষ এখানে আমার কথা বিকৃত করে সুযোগ নিয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান, যার মাধ্যমে তার দেড় দশকের বেশি সময়ের শাসনের অবসান ঘটে।