অনলাইন ডেক্স: সিরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধ নতুন করে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ কাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অভিযান এবং অঞ্চল দখলের ফলে ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।
সরকারি বাহিনী, রাশিয়া এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনী রাশিয়া এবং ইরানের সরাসরি সমর্থনে দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার প্রধান জনবহুল অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।
- রাশিয়ার ভূমিকা:
রাশিয়া সিরিয়ার লাতাকিয়ায় তাদের প্রধান বিমান ঘাঁটি এবং ভূমধ্যসাগর উপকূলে একমাত্র নৌঘাঁটির সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা সরকারি বাহিনীকে সহায়তায় বিমান হামলা পরিচালনা করছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার মনোযোগ ইউক্রেন যুদ্ধে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। - ইরানের ভূমিকা:
ইরানের সামরিক উপদেষ্টা এবং তাদের সমর্থিত মিলিশিয়া দলগুলো আসাদ বাহিনীকে টিকিয়ে রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। তবে ইরানের সমর্থিত হিজবুল্লাহ ইসরাইলের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এবং তুরস্কের ভূমিকা
সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মূলত তুরস্কের সমর্থনপুষ্ট।
- হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস):
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করা এই গোষ্ঠী একসময় আল-কায়েদার শাখা ছিল। বর্তমানে তারা নিজেদের ভাবমূর্তি পাল্টানোর চেষ্টা করছে। - সিরিয়া ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ):
তুরস্ক-সমর্থিত এসএনএ কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। - তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি এবং চেচেন যোদ্ধারা:
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সাথে চীনা এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা যোদ্ধারাও লড়াই করছে।
সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ) এবং যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
- যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা:
প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা পূর্ব সিরিয়ায় মোতায়েন রয়েছে, যাদের লক্ষ্য আইসিস-এর পুনরুত্থান প্রতিহত করা। - তুরস্কের উদ্বেগ:
তুরস্ক মনে করে, এসডিএফ নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)-এর সাথে সম্পৃক্ত, যাকে তুরস্ক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ইসরাইল এবং গোলান মালভূমি
ইসরাইল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে এবং এখন পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণ করছে।
সংঘর্ষের ভবিষ্যৎ
বিদ্রোহীদের সম্প্রতি চালানো অভিযান সিরিয়ায় নতুন করে সংঘাতের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ ও ভূমিকা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে জটিল করে তুলেছে।