নিজস্ব প্রতিবেদক: বিল্লাল বেপারি ডিবির নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। কুইয়ার নেতৃত্বে ডিবি সদস্যরা তাঁর বাড়িতে তল্লাশির নামে তছনছ করে, আর প্রতিবাদ করলে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে বলে, “তুই কি জানিস, গাজীপুরের এসপি হারুন তোকে নিয়ে যেতে বলেছেন।”
বিল্লাল জানান, বাড়ির সামনে শত শত মানুষ জড়ো হলেও ডিবি সদস্যরা তা উপেক্ষা করে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেয়। মাওনা চৌরাস্তা পার হতেই চোখ বেঁধে ফেলে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, হেফাজতের সমাবেশে কত টাকা খরচ করেছেন। বিল্লাল উত্তর না দিলে ডান হাতের মধ্যমার নখ তুলে ফেলা হয়, রক্তে জামা ভিজে যায়। এরপর তাঁকে রড দিয়ে পায়ে পেটানো হয় এবং হাতের আরও তিনটি আঙুলের নখ তুলে ফেলা হয়। ১৮ ঘণ্টা ধরে এভাবে নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে ৫ কোটি টাকা দাবি করে এবং এক স্বজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়। স্বজনদের জানিয়ে দেন, “আমাকে বাঁচাও, ৫ কোটি টাকার ব্যবস্থা করো।”
বিল্লাল জানান, রাত ৩টার দিকে তাঁকে গাজীপুর পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে মসজিদের ইমামকে তওবা পড়ানোর জন্য বলা হলেও শরীর অপবিত্র থাকার কারণে ইমাম তা করতে রাজি হননি। এরপর তাঁকে একটি বনে নিয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায় দৌড়াতে বলা হয়। বিল্লাল বলেন, “আমি দৌড় দেব না বলায় আমার বুকে গুলি করার হুমকি দেওয়া হয়। এসময় একজন ডিবি কর্মকর্তার ফোনে কল আসে এবং তারা আমাকে ফের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।”
পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যরা ৫০ লাখ টাকা জোগাড় করে ডিবি অফিসে দিয়ে তাঁকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তাঁকে পুরোনো জঙ্গি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে দু’দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে ডিবির আয়নাঘরে আরও এক ব্যক্তিকে মারধর করা হয়, যা দেখে বিল্লাল ভীত হয়ে পড়ে এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চান। তিনি পরিবারকে জানান, “আমি বাঁচতে চাই। যা সম্পত্তি আছে, সব বিক্রি করে হলেও টাকা দাও।”
রমজান মাসে, রোজা অবস্থায় নির্যাতনের পর তাঁকে এসপি হারুনের সামনে হাজির করা হয়। এসপি হারুন প্রশ্ন করেন, হেফাজতের সমাবেশে কত টাকা ঢেলেছেন? বিল্লাল না-সূচক জবাব দিলে ভয় দেখিয়ে বলেন, “আমার অফিসাররা যা বলে, তাই করো।” পরে স্বজনরা দুই দফায় ডিবিকে আরও ৮০ লাখ টাকা দেন। রিমান্ডে বিল্লালের ওপর কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি। ৪১ দিন জেলে থাকার পর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
বিল্লাল বেপারি বলেন, “বিএনপি করার কারণে হারুন আমার মতো অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন করেছে। আমি তার মুখোমুখি হয়ে বলতে চাই—কোথায় গেল তোমার টাকা? নির্যাতন আল্লাহ দেখেছেন। তিনি সর্বদা ন্যায়বিচারক।”