নিক্সনের ঘনিষ্ট সহযোগী যুবলীগ নেতা শামীমের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে সোপর্দ….

পার্থ প্রতিম ভদ্র : ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের ঘনিষ্ট সহযোগী যুবলীগ নেতা শামীম তালুকদার (৪৫) এর সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আজ রবিবার দুপুরে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাফর ইকবাল আজ রবিবার দুপুরে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গত শনিবার বিকেল ৫টার দিকে শহরের কুঠিবাড়ি কমলাপুরস্থ বাড়ি থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ফরিদপুরের এর একটি দল। রাতে ডিবি পুলিশ শামীমকে কোতয়ালী থানায় হস্তান্তর করে।

ফরিদপুর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শামীমকে।

শামীম তালুকদার জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০২১ সালের ৫ মে ২১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে শামীম তালুকদার দুইজন যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

শামীম তালুকদার ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের ঘনিষ্টজন ছিলেন।

শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে নিক্সনের নাম ভাঙ্গিয়ে সড়ক বিভাগ, গণপূর্ত এর টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং পাসপার্ট অফিস থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শমীমের ৩০/৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাহিনী ছিল। এ বাহিনীর সদস্যরা শামীমের বিভিন্ন উপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে পুলিশের সহযোগী হিসেবে ছাত্রজনতাকে প্রতিরোধে অংশ নেয় শামীম ও তার বাহিনী।

২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর কোর্ট চত্ত্বরে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা করে। এ হামলায় কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুল, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ওরফে ইছা, সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রব্বনীসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হন।

এ হামলায় নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফরিদপুর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম তালুকদার বলে জানিয়েছিলেন বিএনপি আহত নেতৃবৃন্দ।

ওই ঘটনায় পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি । তবে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিল, যে মামলায় আসামী করা হয়েছিল হামলার শিকার বিএনপি ও সগযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।

বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল প্রতিনিধিকে জানায়, ওইদিন আমি নিজে আহত হই। তবে আমাকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানিয়েছে এ হামলায় নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন যুবলীগ নেতা শামীম তালুলদার। জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসানের উপর সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ক্ষুব্ধ হওয়ায় ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভাঙ্গা কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে নিক্সনের এক সভায় যোগ দিতে গিয়ে নিক্সনের পেটোয়াবাহিনীর হামলার শিকার হয়ে আহত হন জিয়াউল হাসান। ওই ঘটনার পর নিক্সনের পাশে জিয়াউল হাসানকে আর দেখা যায়নি। এরপর থেকে শামীম তালুকদার নিক্সনের অতি ঘনিষ্টজন হয়ে ওঠেন।

প্রসঙ্গত গত ১০ অক্টোবর ফরিদপুর সদরের গেরদা ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মুজাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তার মেয়ের আহত হওয়ার ঘটনাকে উল্লেখ করে একটি মামলা করেন ফরিদপুর কোতয়ালী থানায়।

এ মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়। এজহাহারে উল্লেখ করা নামের ৯৮ নম্বর আসামি জেলা যুব লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম তালুকদার (৪৫)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *