গুলিস্থানে গোলাপ শাহ মাজার ঘিরে রেখেছেন ভক্তরা

নিজস্ব প্রতিনিধি:  রাজধানীর গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার ভাঙার হুমকিতে মাজারটি ঘিরে রেখেছেন ভক্তরা। আওয়ামী সরকারের পতনের পর স¤প্রতি কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজার ভাঙার ঘটনা ঘটছে । বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোলাপ শাহ মাজার ঘুরে দেখা যায়, মাজারের চারদিকে শতাধিক ভক্ত অবস্থান করছেন। এদের কেউ সিজদাহ করছেন আবার কেউ করছেন প্রার্থনা। এ ছাড়া ভক্তদের বড় একটি অংশ মাজারের চারদিকে বিভিন্ন গলিতে অবস্থান করছেন বলে জানান কয়েকজন ভক্তবৃন্দ ।

এদিকে মাজার ভাঙা দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়ও দেখা গেছে । তবে যারা মাজার ভাঙবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাদের কাউকে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায়নি । মাজারের সামনে দাঁড়িয়ে সুফি কমিটির আহŸায়ক সৈয়দ গোলাম মইনুদ্দিন ইয়াজুড়ী বলেন, মানুষ সঠিক কথা পেয়ে যায় বলে তারা পাগল ফকিরকে ঠেকিয়ে রাখতে চায়। কেননা তাদের ধর্ম ব্যবসায় আঘাত লাগে। তারা এতিমখানা দিয়ে ব্যবসা করে, নামাজ নিয়ে ব্যবসা করে, আজান দিয়ে ব্যবসা করে, মসজিদ দিয়ে ব্যবসা করে, এমনকি মসজিদের টয়লেট দিয়েও ব্যবসা করে । তিনি আরও বলেন, স‚রা ইয়াসিনের ২১ নম্বর আয়াতে বলা আছে, যারা ধর্মের বিনিময়ে কিছু চায়, তোমরা তাদের মানিও না। তাই তারা যদি এই অলি আল্লাহর পাগলদের মাজার ভাঙতে পারে তাহলে তাদের ধর্ম ব্যবসা আরও চাঙ্গা করতে পারবে। তারা নামাজের কাফফারাসহ বিভিন্ন ধান্দাবাজির কাফফারা নিয়ে থাকে। এসব কাফফারা দিয়ে তারা তাদের পেট চালায়। অলি আল্লাহর পাগলরা সঠিক কথা বলে দেয়, এজন্য তাদের মুখ বন্ধ করতে তারা এসব মাজার ভাঙার মতো অপকৌশল করছে। অলি আল্লাহর পাগলরা সজাগ আছে । সুফি কমিটির আহŸায়ক বলেন, আল্লাহ বলেছেন তোমরা সত্যবাদীদের সাথী হও। আমরা এই দুনিয়াতে গোলাপ শাহর সাথী হয়েছি। আমরা এই দুনিয়াতে মাইজ ভান্ডারীর সাথী হয়েছি। আমাদের কোনো ভয় নাই। সৎ পথে যে লোক মরে, সে শহীদ হয়। আমরা অলি আল্লাহর পথে রয়েছি, এই পথে জীবন দিতে রাজি আছি।

এই বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই । এদিকে ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলিস্তানে অবস্থিত গোলাপশাহ মাজার ভাঙতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজার ভাঙা কর্মস‚চি’ শীর্ষক একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছিল, সেখানে প্রায় ২২ হাজার মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন । সাধারণত সুফি বা ধর্মীয় প্রচারকদের কবর কেন্দ্রিক মাজার গড়ে ওঠে। যেখানে অনেকে মনোকামনা প‚রণের উদ্দেশ্যে মানত করে থাকেন। যদিও ইসলামিক রীতিতে মাজার ব্যবস্থা কতটা ধর্মসম্মত, তা নিয়ে স্কলারদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত । তবে মাজারটির উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস অজানা । কিংবদন্তি অনুযায়ী মাজারটিতে গোলাপ শাহ নামে একজন আধ্যাত্মিক নেতার সমাধি রয়েছে যিনি ১৯শ শতাব্দীতে ইয়েমেন বা ইরাক থেকে ব্রিটিশ ভারতে এসেছিলেন ।

তবে ঐতিহাসিকরা বলেন যে মাজারের স্থানে অতীতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সমাধি ছিল এবং পরে লোকেরা এটি কোনও আধ্যাত্মিক নেতার বলে বিশ্বাস করে জিয়ারত করতে শুরু করেন । গোলাপ শাহ নামক এক ব্যক্তি সমাধির দেখাশোনা করতেন এবং তার মৃত্যুর পর তাকে সমাধির পাশে সমাহিত করা হয় । পরে লোকজন একে গোলাপ শাহের মাজার বলে ডাকতে শুরু করে । মাজারটি নবদম্পতিদের কাছে জনপ্রিয় এবং বিশ্বাস রয়েছে যে মাজার জিয়ারত করলে দম্পতিদের জীবন সুখের হবে । এখানে প্রতি বছর শাবান মাসের ১৯ তারিখে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *