নিজস্ব প্রতিনিধি: ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক এবং অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দলটির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করছেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতারা জানান, দলটি তাদের ঘোষিত ৩১ দফার পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে। বিশেষ করে, আগামীতে সরকার গঠন করলে জাতীয় সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্ব chambers বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেক বিদেশি দেশ তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা জানিয়েছে।
গত বছরের ১৩ জুলাই বিএনপি ৩১ দফার রূপরেখা ঘোষণা করে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিএনপি এখন এই রূপরেখার বাস্তবায়ন নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছে। দলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন ফোরামে এই রূপরেখার গুরুত্ব তুলে ধরছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা তুলে ধরছেন।
সম্প্রতি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকা বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, গত বছর রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বিএনপি প্রথমে ২৭ দফা এবং পরে ৩১ দফা ঘোষণা করেছিল। বর্তমানে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হওয়ায় তারেক রহমানের বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি শান্তি ও গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা অনুযায়ী, বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘উচ্চ-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রয়েছে। বিএনপি বলছে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ গঠন করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নূরুল আমীন বেপারি জানান, বিএনপির ৩১ দফা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়েছে। বাস্তবায়নের জন্য দলের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনও জরুরি। অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় এলে, এই ৩১ দফা বাস্তবায়িত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপি চলতি বছর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে এবং এখন রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা জনগণের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরতে চাইছে। বিএনপি এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে মিডিয়া সেলসহ বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ৩১ দফা রূপরেখার মাধ্যমে বিএনপি জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফার মতো এই ৩১ দফাও একটি সফল ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর করবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিএনপির প্রস্তাবিত দ্ব chambers বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা ও জাতীয় সরকার একটি শুভ উদ্যোগ। এটি সুশাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে এবং দলীয় স্বার্থের বাইরে সাধারণ জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, বিএনপির প্রস্তাবিত জাতীয় সরকার ও দ্ব chambers সংসদের ধারণা বাংলাদেশের জন্য বাস্তবসম্মত এবং প্রশংসনীয়। তারেক রহমানের নেতৃত্বের সাম্প্রতিক বক্তব্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির বিশেষ সহকারী বদরুল আলম চৌধুরী জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মাঝে প্রশংসিত হয়েছে। তার ৩১ দফার প্রস্তাবনা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে।