নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা আমাদের অধিকারভুক্ত নয়। জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কখন তারা আমাদের বিদায় দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কেউই শাসনব্যবস্থায় আসার জন্য আগ্রহী নই। নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। তবে দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে ছাত্রদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ছাত্ররা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা, এবং আপামর জনসাধারণ আমাদের সমর্থন দিয়েছে। আমরা পুরো শক্তি দিয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন করব এবং জনগণ যখন বলবে, তখনই সরে যাব।”
ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর রবিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে তার প্রথম ভাষণ দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন তিনি। ভাষণের শুরুতে তিনি আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণ করেন এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারের দুর্নীতি ও ঘুষবিরোধী কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, “স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যেসব শহীদের আত্মত্যাগ করা হয়েছিল, তা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের হাতে ধ্বংস হয়ে গেছে। দুর্নীতি দেশের প্রতিটি স্তরে ঢুকে গেছে। ছাত্র-জনতা যে স্বপ্ন নিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিল, সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।”
তিনি বলেন, “গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকার প্রধান দেশত্যাগ করার পর আমরা একটি মানবিক, গণতান্ত্রিক, এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প করেছি। আমাদের লক্ষ্য এক, এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের লক্ষ্যে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।”
ড. ইউনূস জনগণের ভোটাধিকার এবং স্বৈরাচারের অপশাসন নিয়ে কথা বলেন, “মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে স্বৈরাচার তার নিজের স্বার্থ সিদ্ধির পথ তৈরি করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করব।”
তিনি উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের অপশাসনের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থা পঙ্গু হয়ে গেছে, এবং দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার লুটপাট করা হয়েছে। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে, এবং বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, এসব অবিচারের বিরুদ্ধে নতুন সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ড. ইউনূস বলেন, “সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ হয়েছে, এবং আমাদের ওপর জনগণের যে প্রত্যাশা রয়েছে তা পূরণে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ রেখে গেছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।”
প্রধান উপদেষ্টা জনগণের ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা কিছু দাবি আছে, তা লিখিতভাবে আমাদের জানিয়ে দিন। আমরা আইনের সীমারেখায় থেকে সেই সব দাবি পূরণে কাজ করব।”
ড. ইউনূস বলেন, “দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। আমাদের উপদেষ্টারা দ্রুত তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন, এবং পর্যায়ক্রমে সব সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও এটি বাধ্যতামূলক করা হবে।”
তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আইনের ধারা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
অর্থনীতি, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা একটি উদার, গণতান্ত্রিক, এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।”