আমাদের এই মুক্তি, এই স্বাধীনতা অনেকের পছন্দ হচ্ছে না ,তারা এটাকে মুছে দিতে চায়…ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ডেস্ক রিপোর্ট : ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,আমাদের এই অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা এটাকে মুছে দিতে চায়, এটাকে নতুন ভঙ্গীতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়। আমাদের এখানে নাকি ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটছে, তা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষার জন্য তারা এগিয়ে আসতে চায়। এখন সেগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা বা বাস্তবতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। এটা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় না। জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জগদ্দল পাথর জাতির বুকের ওপর থেকে সরানো হয়েছে। দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই মুক্তি, এই স্বাধীনতা অনেকের পছন্দ হচ্ছে না নানাভাবে এটাকে উল্টে দেয়ার চেষ্টা চলছে। তাই দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে একজোট থাকতে হবে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অক্টোবরে সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন হয়েছে। আমরাও পূজার আনন্দে শরিক হয়েছিলাম। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। দেশকে নতুন করে অস্থির করার চেষ্টা চলছে।তিনি বলেন, ‘যে বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে আরেক বাংলাদেশের কাহিনী রচনা করে যাচ্ছে। সারাক্ষণ নানা রূপে তারা এটা করে যাচ্ছে। এটা যে এখন এক দেশের মধ্যে আছে তা নয়, বিশেষ বিশেষ বড় দেশের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এই অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা এটাকে মুছে দিতে চায়, এটাকে নতুন ভঙ্গীতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়। আমাদের এখানে নাকি ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটছে, তা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষার জন্য তারা এগিয়ে আসতে চায়। এখন সেগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা বা বাস্তবতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। এটা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় না। জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।

বাংলাদেশ নিয়ে সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করলাম, তারা এটাকে মুছে দিয়ে আগেরটায় ফিরে যেতে চায়। মুখে বলছে না যে আগেরটা, কিন্তু ভঙ্গী হলো- আগেরটা ভালো ছিল। তাদের শক্তি এত বেশি যে তারা মানুষকে এর ভেতরে ভেড়াতে পারছে। তাদের কল্পকাহিনীর কারণে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে যে এটা কী ধরনের সরকার হলো।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা বার বার তাদের বলছি যে আপনারা আসেন এখানে, দেখেন; এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু না, তারা ওখান থেকেই কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের সাড়া দুনিয়াকে বলতে হবে যে আমরা এক, আমরা যেটা পেয়েছি সেটা একজোট হয়ে পেয়েছি; কোনো মতবাদের কারণে পাইনি, ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি, যারা আমাদের ওপর চেপে ছিল, তাদের উপড়ে ফেলেছি। এটাই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে, সবাই মিলে যেন এটা করতে পারি। আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা মস্ত বড় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনারা সবাই ভালো বোঝেন। সবাই মিলে আমরা একজোট হয়ে যেন কাজটা করতে পারি। সবাই একত্র হয়ে বললে একটা সমবেত শক্তি তৈরি হয়, এই সমবেত শক্তির জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আসতে শুরু করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়।

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।তবে জাতীয় পার্টিকে সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

এর আগে দেশের চলমান নানা ইস্যুতে আলাপ করতে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় যমুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *