বিশেষ প্রতিনিধি: দেশের বেশ কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যে ‘মৃতপ্রায়’ এবং অনেক ব্যাংক ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি ‘মৃতপ্রায়’ ব্যাংকগুলোকে পুনরায় সচল করার চেষ্টা এবং ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ব্যাংকগুলোকে স্বাভাবিকভাবে মরে যেতে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, “মৃতপ্রায় ব্যাংকগুলোকে রক্ষার জন্য শেষবারের মতো চেষ্টা করা যেতে পারে। এর জন্য এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।”
সোমবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, ‘‘অনেক ব্যাংক ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ হয়ে গেছে এবং এগুলো আর ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। তাই তাদের মরে যেতে দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত হবে। সরকার এ ধরনের ব্যাংকগুলোকে অর্থায়ন ও মূলধন দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, যা কার্যকর হচ্ছে না।’’
তিনি ব্যাংকগুলোর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে না জানালেও উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১টি ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, ব্যাসেল নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোও ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ হয়ে গেছে। একসময় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ভালো অবস্থায় ছিল, কিন্তু দখল হওয়ার পর তা মুমূর্ষু অবস্থায় পৌঁছেছে।”
সিপিডির বক্তব্যে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতি দুর্বল ছিল, তখন ব্যাংক খাত এগিয়ে এসে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং অর্থায়নের মাধ্যমে শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ফলে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়তা করেছে।
তবে বর্তমানে ব্যাংক খাতের কার্যক্রম ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশের ব্যাংক খাত এখন গুটি কয়েক গোষ্ঠীর জন্য নিয়মনীতি তৈরি করছে এবং তা নিয়মনীতির বাইরে চলে গেছে।’’
তিনি অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বাধীনতা হারিয়েছে। গত এক দশকের বেশি সময়ে ব্যাংকিং খাতে ২৪টি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি হয়েছে, যেখানে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে।
সিপিডি ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তিন মাসের জন্য একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেছে। এছাড়াও, তারা ‘দ্বৈত প্রশাসন’ কমানোর লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ এ বিভাগের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ক্ষীণ হয়েছে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা অপরিহার্য।