ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন 

ঢাকা, ১০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : নির্বাচন কমিশন (ইসি) ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। কমিশন নির্বাচনের প্রাক প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে কাজ শুরু করেছে। 

এদিকে, আজ নির্বাচন কমিশনের অষ্টম সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এছাড়া কমিশন আজ আরো পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে। গত ১৫ দিনের ইসির কার্যক্রম এবং তৎপরতায় কমিশনের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারী ও সাধারণের মধ্যে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়েছে যে, নির্বাচনের ঘোষণা আসার সাথে সাথেই নির্বাচনী মাঠের বিশ্বাসযোগ্য আবহ তৈরি করতে কমিশন প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।   

আজ বৃহস্পতিবার গঠিত কমিটিগুলো হলো-ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তদারকি সংক্রান্ত কমিটি, আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি, মাঠ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় কমিটি, নির্বাচনী আইন, বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা এবং ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি (নির্বাচনী তদন্ত) কমিটির কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয় কমিটি এবং দেশের বাইরে ভোটদান এবং দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সম্পর্কিত কার্যাবলি সমন্বয় কমিটি।

কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, অতীতের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল তা মুছে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কমিশন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জুলাই বিপ্লব থেকে নির্বাচন কমিশন শিক্ষা নিয়েছে যে, কোন অবস্থাতেই যেন জনগণের প্রত্যাশার অপূর্ণতা ও জন আকাঙ্ক্ষার ঘাটতি না থাকে।

কমিশন বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবুল ফজল মোঃ সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। এ জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। 

তিনি বলেন, কমিশন হিসেব করে দেখেছে প্রবাসীদের পোস্টাল ভোট সরকারি ডাক বিভাগে নিতে গেলে খরচ হবে প্রতি ব্যালটে ৭শ টাকা এবং ডিএইচএল বা কোরিয়ার সার্ভিসে নিতে গেলে প্রতি ব্যালটে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। কমিশন এ বিষয়টি কীভাবে করা যায় সে জন্য আইটি বিভাগের সঙ্গে আরো আলোচনা করবে। 
কমিশনার জানান, নির্বাচনে প্রতীকের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শাপলা প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। আগামীতে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সীমানা নির্ধারণের আবেদনগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে। 

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, কমিশন এখন অনেক ব্যস্ত সময় পার করছে। কমিশন নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রস্তুত করার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সার্বিকভাবে ধরে নেয়া যায় যে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে শুরু করেছে।   

আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনের পৃথক অফিস আদেশে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি গঠন করায় নির্বাচন প্রস্তুতির অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। নির্বাচন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের এই পাঁচ কমিটিতে প্রধান হিসেবে আছেন চারজন নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কার্যক্রম তদারকি কমিটির সভাপতি করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদকে। এই কমিটি নির্বাচনী আইন, বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা এবং ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি (নির্বাচনী তদন্ত) কমিটির কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয় করবে। এ বিষয়ে বুধবার ইসির উপসচিব (সংস্থাপন) মোঃ শাহ আলম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘৫ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত (স্মারক নং ১৭,০০,০০০০,০০৯,০৬,০০৮.১৭-৫৯৩) প্রজ্ঞাপনের অনুবৃত্তিক্রমে নির্বাচনী আইন, বিধি, প্রবিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন সম্পর্কিত কার্যাবলি সম্পাদন এবং ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে নিম্নরূপ কমিটি গঠন করা হলো।’

কমিটির সাত সদস্য হলেন ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, মুখ্যসচিব (আইন), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১), উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) এবং উপসচিব (নির্বাচন সহায়তা ও সরবরাহ)। এছাড়া কমিটি প্রয়োজনে যে কোন কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।

কমিটির কার্যপরিধি হবে-আইন, বিধি, প্রবিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন সম্পর্কিত কার্যাবলি। আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে মাঠ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রিটার্নিং অফিসারসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য নির্দেশিকা/ম্যানুয়াল প্রস্তুত কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয় এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবুল ফজল মোঃ সানাউল্লাহকে সভাপতি করে আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, প্রকল্প পরিচালক, আইডিইএ প্রকল্প (২য় পর্যায়), যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২) এবং উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২)।

কমিটির কার্যপরিধি হবে- ক) নির্বাচন পরিচালনা কাজের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ; খ) নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিতব্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের তদারকি ও সমন্বয়; গ) পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, সশস্ত্র বাহিনী, আনসার ও অন্যান্য সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণ; ঘ) ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন; ঙ) ব্যালট পেপারসহ বিভিন্ন নির্বাচনি মালামাল পরিবহণ, বিতরণ এবং ভোটগ্রহণ কাজে নিরাপত্তা বিধানের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের সহায়তা প্রদান; চ) নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত সকল বাহিনীর সাথে সমন্বয়পূর্বক সম্ভাব্য সহিংসতা, সন্ত্রাস বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নিরূপণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।

নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সরকার-কে সভাপতি করে  মাঠ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে । কমিটির সদস্যরা হলেন- ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২), উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২)। এছাড়া কমিটি প্রয়োজনে যে কোন কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।

কমিটির কার্যপরিধি হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের সাথে মাঠ প্রশাসনে নিয়োজিত/দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মকর্তাগণের নিয়মিত যোগাযোগ। সমন্বয় ও পরামর্শ প্রদান, মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান, মাঠ প্রশাসন হতে নির্বাচন কমিশনে তথ্য প্রেরণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী রিপোর্টিং পদ্ধতি প্রবর্তন ও মনিটরিং।  নির্বাচনী সময়ে উদ্ধৃত যেকোনো সংকট নিরসনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান; ঙ) আচরণ বিধি প্রতিপালনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে সমন্বয় ও পরামর্শ প্রদান; এবং চ) প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।

নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদকে সভাপতি করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তদারকি সংক্রান্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২,) উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২)। এছাড়া কমিটি প্রয়োজনে যে কোন কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।

এই কমিটির কার্যপরিধি হচ্ছে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তা/ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, তদারকি এবং প্রযোজ্য সংশোধন বিষয়াদি, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যাবলি তদারকি, নির্বাচনি কর্মকর্তা/ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদারকি ও সমন্বয়; এবং  প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।

দেশের বাইরে ভোটদান এবং দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সম্পর্কিত কার্যাবলি সমন্বয় কমিটি: এবং দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সম্পর্কিত কার্যাবলি সমন্বয় কমিটির সভাপতি করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবুল ফজল মোঃ সানাউল্লাহকে। কমিটির সদস্য হলেন-  ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২), উপসচিব (নির্বাচন সহায়তা ও সরবরাহ), পরিচালক (জনসংযোগ) ও সিস্টেম ম্যানেজার (আইসিটি)।

এই কমিটির কার্যপরিধি হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটাধিকার প্রদানের পদ্ধতি প্রণয়ন; প্রবাসীদের ভোট প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় সমন্বয়;  প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশের দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয়, পর্যবেক্ষক নীতিমালা অনুসারে দেশী এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়; এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *