ইলিশ আহরণে মুখ থুবড়ে পড়েছে উপকূলের ব্যবসায়ীরা

বিশেষ প্রতিনিধি: ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে, তবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ইলিশ ব্যবসায়ীরা চরম অর্থ সংকটে ভুগছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী, দিনে দুই লাখ টাকার বেশি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এক লাখ টাকাও উত্তোলন করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা মোকাম থেকে ইলিশ সরবরাহের জন্য ব্যাংকের হিসাব নম্বরে অর্থ পরিশোধ করলেও ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করতে পারছেন না। এর ফলে, মহাজনরা প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে ট্রলার পাঠাতে পারছেন না গভীর সমুদ্রে ইলিশ আহরণে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের (বিএফডিসি) ইলিশ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অর্থ সংকটে পড়ায় অবতরণ কেন্দ্রে রাজস্ব আদায়ে বকেয়া বাড়ছে। দক্ষিণের অন্যান্য মোকামেও ব্যবসায়ীরা একই সংকটে ভুগছেন। পাথরঘাটায় সাগরে মাছ আহরণে যাওয়া ট্রলারগুলোর একটি বড় অংশই এখন মোজামে বেঁধে রাখা হয়েছে। জেলে-শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

একজন জেলে, হাবিবুর রহমান, জানান, তিন দিন আগে ২২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছিলেন, তবে ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় টাকা না পেয়ে তারা সাগরে যেতে পারছেন না। সাগরে প্রচুর ইলিশ থাকলেও তারা যেতে না পারায় ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা ইলিশ আহরণ করছেন।

পাথরঘাটা মৎস্য পাইকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন জানান, প্রতিদিন এখানে অন্তত ৩ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে, তবে ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় টাকা না পেয়ে ট্রলার মালিকদের অর্থ দিতে পারছেন না।

আড়তদার সগীর হোসেন জানান, গত পাঁচ দিনে পাথরঘাটা বিএফডিসি মোকামে ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে, কিন্তু ব্যাংক মাত্র ৩০ লাখ টাকা প্রদান করেছে। জেলেদের প্রয়োজন মেটাতে সুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিতে হচ্ছে।

পাথরঘাটা বিএফডিসির ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ শিকদার জানান, ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় গত পাঁচ দিনে আড়তদারদের কাছে ২৫ লাখ টাকার রাজস্ব বকেয়া পড়েছে।

পাথরঘাটা সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক সুমন রাহা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা লেনদেন করছেন, তবে শাখাগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান বলেন, মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *