আবু সাঈদকে গুলির ভিডিও দেখলেন ট্র্যাইব্যুনাল

ঢাকা, ৩০ জুন, ২০২৫ (বাসস): বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করার সিসিটিভি ফুটেজ ও  টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও দেখলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ দেয়ার আগে সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজ ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও আজ কম্পিউটারের মনিটরে দেখেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল- ২।

আজ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দেয়ার পর তা ট্র্যাইব্যুনালে উপস্থাপন করে অভিযোগটি আমলে নেয়ার আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

এরপর ট্র্যাইব্যুনাল- ২ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি আমলে নিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১০ জুলাই দিন ধার্য করেন।

সেই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে থাকা ৩০ জনের মধ্যে অন্য মামলায় গ্রেফতার চারজনকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ জুলাই ট্র্যাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেয় হয়েছে। এছাড়া পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদনে ট্র্যাইব্যুনালে ১০ জুলাই দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-২।

আজ প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি করেন। এ সময় অপর প্রসিকিউটররা ট্র্যাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত সংস্থা আবু সাঈদ হত্যার যে তদন্ত আমাদের কাছে জমা দিয়েছে সেখানে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করে  ট্র্যাইব্যুনাল-২ তে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।’

এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগে থাকা চার আসামির মধ্যে পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে আগামী ১৮ জুন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশকে ১৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় ট্র্যাইব্যুনাল-১।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *