বিশেষ প্রতিনিধি: দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশ্নটি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল, তবে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন, যা এই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি কি বন্ধ হতে চলেছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, যা ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মনোভাবকে শক্তিশালী করেছে। বিশেষ করে হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের রাজনীতি চান না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা হলগুলোকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত করার দাবি জানান এবং প্রভোস্টদেরকে বাধ্য করেন তা মেনে নিতে। শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করা হোক, যা দলীয় লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এমনকি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠনের সঙ্গে ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জড়িত। অতীতে ছাত্ররাজনীতি ছিল মানুষের কল্যাণের জন্য, কিন্তু সাম্প্রতিককালে এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা রাজনীতিবিমুখ হচ্ছেন। তারা মনে করেন, ছাত্ররাজনীতির সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার পর শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন এবং বেশ কয়েকটি হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করেছেন। প্রভোস্টরা চাপে পড়ে হলগুলোকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সিন্ডিকেটের অনুমোদন না থাকায় এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
বুয়েটের উদাহরণ টেনে শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর সেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন পরিবেশ চান, যেখানে রাজনীতির নামে কোনো নির্যাতন বা দখলদারিত্ব থাকবে না।
কিছু শিক্ষার্থী মনে করেন, ছাত্ররাজনীতি একেবারে নিষিদ্ধ না হলেও এটি একটি কাঠামোর মধ্যে আনা উচিত। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে রাজনীতি করাটা জরুরি, তবে দলীয় লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত এবং শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে সহায়ক হতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক রাজনীতির সংস্কারের পক্ষে কথা বলছেন। তারা মনে করেন, সুষ্ঠু পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক চর্চা নিশ্চিত করলে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি গড়ে তোলা সম্ভব, যা দলীয় লেজুড়বৃত্তির বদলে শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।