সচল হচ্ছে থানার কার্যক্রম, ভীতি কাটছে মানুষের

বিশেষ প্রতিনিধি: দেশজুড়ে পুলিশের কার্যক্রম আবারও সচল হতে শুরু করেছে, এবং জনগণের মধ্যে ভীতি কাটতে শুরু করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং প্রাণহানির পর বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর এই হামলা বাড়তে থাকে, যার ফলে থানাগুলোর কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশি অস্ত্র-গুলি লুট হওয়ায় এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকায় থানাগুলোতে পুলিশ সদস্যরা আসতে সাহস পাচ্ছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের থানাগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এই অবস্থার ফলে, রাজধানীসহ সারা দেশে রাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। লোকজন নিজেদের নিরাপত্তার জন্য রাতভর পাহারা দেওয়া শুরু করে, যদিও তারা বিশ্বাস করে যে থানাগুলোর কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে আতঙ্ক পুরোপুরি দূর হবে। এ অবস্থায় নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত থানার কার্যক্রম পুনরায় চালুর আহ্বান জানান নগরবাসী। পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে থানাগুলোর কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হচ্ছে এবং উদ্ধার হচ্ছে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৩৮টির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ৪৫টির কার্যক্রম চালু হয়েছে, তবে যেসব থানা আগুনে পুড়ে গেছে, যেমন ডিএমপির উত্তরা পূর্ব, যাত্রাবাড়ী, খিলক্ষেত, পল্টন ও কদমতলী থানা, সেখানে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো হবে। এই কমিটি আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে যৌথ টহল ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

ঢাকার ভাটারা থানায় সরেজমিন দেখা যায়, থানার সামনে ও ভেতরে পোড়া ছাই ও লুট হওয়া জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় পুলিশের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয়রা থানাগুলোর নিরাপত্তায় কাজ করছে। বাড্ডা থানার সামনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থানা না থাকলে দেশে চুরি, ডাকাতি বেড়ে যাবে, তাই তারা নিজেরাই থানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

এছাড়াও, চট্টগ্রাম, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পিরোজপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলার থানাগুলোতেও কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে, যদিও তা সীমিত পরিসরে।

পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করা হবে, এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সহযোগিতায় নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *