বিশেষ প্রতিনিধি: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের সরকারী ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন এবং আর্থিক খাত সক্রিয় করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে শুক্রবার দুপুরে তাঁর বাসভবন ‘যমুনা’য় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শুরু হওয়ার আগে উপদেষ্টাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করা হয়।
শুক্রবার সকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেন। আজ শনিবার সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের বাড়ি এবং রংপুর মেডিকেলে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার শপথ নিতে ব্যর্থ হওয়া তিন উপদেষ্টার শপথ আজ শনিবার বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তবে সময় এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শপথ নেয়া বাকি তিন উপদেষ্টা হলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় এবং নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-ই-আজম।
প্রথম বৈঠকে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত:
বৈঠক দুপুর ১২টায় শুরু হয়। আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে ছিল স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মন্ত্রণালয়ে সম্পৃক্ত করা, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন এবং আর্থিক খাতের উন্নয়ন। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সাইবার সিকিউরিটি আইন এবং ডাকাতির বিষয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নেওয়া। সময় অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, ‘সরকারের উপদেষ্টাদের সহকারী হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। ছাত্রসমাজ দেশের শক্তি, এবং আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।
সুপ্রদীপ চাকমাকে নিয়ে প্রতিবাদ
সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমাকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে নিয়োগের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাজ প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। গতকাল বিকেলে তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’য়ের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরা সরকারের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান এবং সুপ্রদীপ চাকমার নিয়োগকে মশকরা হিসেবে অভিহিত করেন।
উপদেষ্টা দপ্তর বণ্টন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার উপদেষ্টাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। তার অধীনে রয়েছে ২৭টি মন্ত্রণালয়। অন্যান্য উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহউদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়; আসিফ নজরুল আইন মন্ত্রণালয়; আদিলুর রহমান খান শিল্প মন্ত্রণালয়; হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়; মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়; শারমিন মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়; ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।