ধানমন্ডি সেন্ট্রাল রোডের ৬ তলা ভবনটি আপন ভাই বোনদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিতাড়িত করে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর !

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে আপন ভাই বোনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৯০ নম্বর সেন্ট্রাল রোড দুই কাঠা জমির উপরে ৬ তলা ভবনটি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে আপন বড় ভাই। বড় ভাই মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল। ওই সময় মোতাহারের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় তার ব্যক্তিগত সহকারী কামাল সরদারকে (২৫) সুকৌশলে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে বলে নিহত পরিবারের অভিযোগ। বাদী নিহতের ভাই নিজাম উদ্দিন সরদার আজও তার ভাইয়ের বিচারের জন্য প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন।

সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর নিহত পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখে বিচারে কাঠগড়ায় যাইতে দিচ্ছে না। বর্তমানে মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে মানুষকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জাহাঙ্গীরের বাবা একে আহম্মদ হোসেন ছোট ভাই একে মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর ওই বাড়িটি উদ্ধারের জন্য ও তাদের নিরাপত্তার জন্য কলাবাগান থানায় লিখিত ভাবে কয়েকবার অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের লোকজন তা কোন কর্ণপাত করেননি।

সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর পোড়াবাড়িটি দখল করে ভাড়া দিয়ে মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে বলছেন এ বাড়ির ব্যাপারে কেউ যদি আসো তাহলে তোমরা লাশ হয়ে ফিরে যাবে। সুইডেন প্রবাসী হয়েও ঢাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনরকম বিচার পাচ্ছে না প্রবাসী মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর কলাবাগান থানার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, আমার বাবা এ কে আহম্মদ হোসেন জীবিত থাকাকালীন আমাদের চার ভাই বোনের নামে সেন্টাল রোডস্থ ৯০ নম্বর বাড়িটি রেজিস্ট্রি দলিল করে দিয়ে যান। ২০১১ সালে রেজিস্ট্রি সূত্রে ওই বাড়ির মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর, মোজাম্মেল হোসেন মুরাদ, আফরোজা জাহান নাসরিন ও সামিয়া আহমেদ। বড় ছেলে মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীরকে তার বাবা গ্রামের বাড়িতে জমি ও নগদ ৮০ লাখ টাকা দিয়েছেন। একে আহম্মদ হোসেন ওই সময় জাহাঙ্গীরকে বলে ৯০ নম্বর সেন্ট্রাল রোডের বাড়িটি আর কোনদিন দাবি করতে পারবা না। সেই শর্তে জাহাঙ্গীর অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে বাবার সিদ্ধান্ত মেনে নেন। কিন্তু বাবার দেওয়া ওয়াদা অমান্য করে সন্ত্রাসী দিয়েওই বাড়িটি দখল করে নিয়েছে জাহাঙ্গীর। ওই বাড়ির প্রকৃত মালিক যারা তারা এখন বাড়িতে প্রবেশ করতে পারছে না সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীরের কারণে।

পরিবারের অভিযোগে আরো জানা যায়, সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর প্রথম স্ত্রী ও দুই মেয়েকে সুইডেনে রেখে ২০০৮ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার সুলতানা রাজিয়া নামের একটি মেয়েকে আবার বিয়ে করেন। বর্তমানে দুই ছেলে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন জাহাঙ্গীর। দ্বিতীয় বইয়ের ইশারায় জাহাঙ্গীর সব ধরনের অপকর্মের কর্মকাণ্ড করছে।

পরিবারের সূত্রে আরও জানা যায়, ৫২ নাম্বার ওয়ার্ড বর্তমানে১৮ নাম্বার ওয়ার্ডের তৎকালীন সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে ১৬ মার্চ হাতিরপুল এলাকায় তার ব্যক্তিগত সহকারী কামাল সরদারকে জাহাঙ্গীর সহ তার বাহিনী দিয়ে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয় বলে নিহতের পরিবারেরসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ। ওই সময় তার সাথে ছিল কল্লোল ও বাবু। কামালকে হত্যা করে লাশ গুম করে রেখেছিল তারা।

নিহতের ভাই নিজাম সরদার জানান, কামাল সরদার নিহত হওয়ার পর থেকে কমিশনার জাহাঙ্গীর নিখুঁত ছিল কয়েকদিন। কামালের মরদেহ খুঁজাখুঁজি করি না পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন সঠিক উত্তর দেননি। পরে ১৭ই মার্চ হাতিপুর এলাকা থেকে কামালের মরদেহ উদ্ধার করে নিউমার্কেট থানার পুলিশ। কামালের হত্যার পিছনে সন্ত্রাসী কমিশনার জাহাঙ্গীরের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

তিনি আরও জানান, কমিশনার জাহাঙ্গীরের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় সুপরিকল্পিতভাবে কামালকে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবা ইসাহাক সর্দার বাদী হয়ে জাহাঙ্গীর সহ ৬ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি হত্যা মামলা দাখিল করেন। পরে সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর ওই মামলায় জামিনে এসে নিহত পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা তুলিয়ে নিতে বলে। নিহত পরিবারেরা আজও সুবিচার পাইনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বিএনপি সমর্থিত সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর (সাবেক ৫২, বর্তমানে ১৮ নাম্বার ওয়ার্ড) মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর তৎকালীন বিএনপি’র আমলে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আওয়ামীলীগে নেতাকর্মীদের অত্যাচার, নির্যাতন এবং মামলায় অতিষ্ঠ হয়ে একপর্যায়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হই। আমি বাড়ি দখল করিনি আমার প্রাপ্যটা আমি নিয়েছি। এখনো তার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীরের অভিযোগ তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের ভয় ভীতি ও মামলা দিয়ে মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীরের পরিবারকে কোন ঠাসা করে রেখেছে। তিনি বিভিন্ন নির্যাতনে শিকার হন ও একের পর এক মামলা মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর জানান, আমি বিএনপি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে পদ পদবি নিয়ে ছিলাম। তিনি জানান, গত ২০০৯ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলা দলীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি। কিন্তু তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে আজ তিনি দল থেকে বিতাড়িত। বর্তমানে দলে কোন পদ পদবী নেই। তারপরও বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি করে চলছে। বর্তমানে নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দার কাছে সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর নামে পরিচিত হয়ে গেছে।

আলমগীর জানান, আমি আমার বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি কলাবাগান থানাধীন ৯০ নাম্বার সেন্ট্রাল রোডের দুই কাঠা জায়গায় উপর ছয় তলা বাড়িটি আমরা চার ভাই বোন মিলে বসবাস করছিলাম। গত ৫ আগস্ট এর পর থেকে সন্ত্রাসী মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর একাই আত্মসাৎ করে দ্বিতীয় স্ত্রী কে নিয়ে বসবাস করছে।

তিনি বলেন, আমার নামে ষড়যন্ত্রমূলক বিভিন্নভাবে নির্যাতন ভয়ভীতি ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে। এবং পুলিশ প্রশাসন দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করার জন্য চেষ্টা চালায়। আমি এক পর্যায়ে নিরুপায়হয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুইডেন চলে আসি। গত ২০১৭ সালে নিজে বাদী হয়ে জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী নামে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ৯০ নাম্বার সেন্ট্রাল রোড বাড়িটি উদ্ধারের জন্য জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় জিডি ও মামলা করেছি। এবং আমার বাবাও এই দখলবাজ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে থানায় কয়েকটি জিডি করেছে তার নিরাপত্তা চেয়ে।

এব্যাপারে একে আহম্মদ হোসেন গত ২০১১ সালে ১৩ই ফেব্রুয়ারি একটি হলফনামায় সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর জোরপূর্বক ভাবে অঙ্গীকার লিখে নিয়েছেন। হলফনামায় যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে সেই সব তথ্য ও তার হোসেন জাহাঙ্গীরের মনগড়া। জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই আলমগীর ওই বাড়ির বিষয়ে আদালতে মামলা করেন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

গত বছরে ১৮ সেপ্টেম্বর মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীরের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করেন। পিটিশন মামলার নাম্বার ১১১। মামলা চলমান রয়েছে। আবার আমি বাংলাদেশে আসি। ওই বাড়িটি আত্মসাৎ করার জন্য জাহাঙ্গীর বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করছে । জাহাঙ্গীর ষড়যন্ত্রকারীদের দিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও অন্যায় করে যাচ্ছে।

পরিবারের অভিযোগে সূত্রে জানা যায় , মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর দেশ-বিদেশে আন্ডারওয়ালের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জড়িত এবং বিভিন্ন অপকর্ম সাথে জড়িয়ে দেশ-বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত তার এই অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। আমি এইসব হয়রানি থেকে পরিত্রাণ চেয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের চার ভাই বোনের ওই বাড়িটি উদ্ধারের সহযোগিতা কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com