এ.বি.এম.হাবিব : নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ গুলজার রহমান একজন দন্ডপ্রাপ্ত বা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হয়েও প্রায় দেড় বছর পর গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে মান্দা থানার পুলিশ।
মামলা সুত্রে জানা যায়, বাঙ্গাল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্থানীয় মোঃ সমশের আলী সরদারের ছেলে মোঃ গুলজার হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীসহ একাধিক এনজিও এবং বিভিন্ন এলাকার পরিচিত বহু মানুষের কাছ থেকে চেকের পাতা দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে।
গত প্রায় সাড়ে ৭বছর পূর্বে মান্দা থানার মৈনম ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মোঃ খয়বর আলীর ছেলে মোঃ খায়রুল ইসলামের ২০১৯ সালের দায়ের করা অর্থ আত্মসাৎ এর মামলার দেড় বছর পূর্বে গত ৩০/১২/২৩ ইং তারিখে গুলজার নামের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালত রায় প্রদান করেন। অর্থের পরিমান ৮লক্ষ ২০হাজার টাকা পরিশোধ এবং ১বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন।
এরপর আইনের চোখে পলাতক থাকলেও সে দিব্বি প্রায় দেড় বছর ধরে চাকরি করেই চলছেন।স্থানীয়রা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, স্কুলের হেড মাস্টার কাশেমকে কিছু টাকার বিনিময়ে হাত করে, স্কুলে না এসেও ৭ দিন ১৫ দিন পর পর এসে শুধু স্বাক্ষর করে যান এবং বেতনও প্রতি মাসেই তুলে নেয়। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে জাতীয় দৈনিক বিভিন্ন পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হলে,মান্দা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও হেড মাষ্টারকে সোকজ করা হয়।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে বাঙ্গালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেলে দেখা যায়, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গুলজার ক্লাস নিচ্ছেন। ক্লাস শেষে বেরুলে, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হয়েও কিভাবে ক্লাস নিচ্ছেন বা চাকরি কিভাবে এখনো রয়েছে জিজ্ঞেসা করিলে, অকপটে তিনি স্বীকার করে বলেন,হেড মাস্টার কাশেম সাহেব তাকে হেল্প না করলে এতো কিছু করা সম্ভব হতো না বলে সে জানায়। এমন সময় পুলিশ গুলজার মাস্টারকে গ্রেফতার করতে আসলে প্রধান শিক্ষক কাশেম বাঁধা দিয়ে, গুলজার মাস্টারকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। এ বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,এভাবে গ্রেফতার করার কোন নিয়ম নেই, এটা নেই,ওটা নেই বলে পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে যায় এবং পুলিশদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি খারাপ পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে।
স্থানীয় ভাবে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে, আসামি গুলজার শিক্ষকের বিরুদ্ধে চিটার,বাটপার বলে উল্লেখ্য করে বলেন,বহু মানুষের টাকা মেরে খেয়েছে এই শিক্ষক। বহু মানুষের টাকা মেরে পঙ্গু করে রেখেছে এই গুলজার মাস্টার। অনেক সংসারও ধংশ করেছে এই কুলাঙ্গার। একজন শিক্ষক এমন চিটার হয় কি করে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি এই প্রধান শিক্ষকের জন্যই, চাকরী করতে পারছে বলে উচ্চস্বরে কথা বলতেই প্রধান শিক্ষক কাশেম স্কুলের ভিতর চলে যায়। উপস্থিত স্থানীয় সকলেই এই গুলজার মাস্টারের কঠিন শাস্তির দাবী জানান।
গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকালে নওগাঁর সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানের দিক-নির্দেশনায়, মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মুনছুর রহমানের পরিকল্পনায়, দীর্ঘদিনের পলাতক আসামি গুলজারকে গ্রেফতারে এ এস আই রবিউল ইসলামসহ ৪/৫ জন পুলিশের অভিযানে রাত প্রায় ৮টার সময়,উপজেলার বাঙ্গালপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। এ ছাড়াও মান্দা উপজেলার ব্যারিল্যা গ্রামের আমতলি থেকে মৃত মজিবর জোয়ারদারের ছেলে পলাতক আসামিমোঃ বাচ্চু জোয়ারদারকেও একই রাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে মান্দা থানার পুলিশ।
এ বিষয়ে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মুনছুর রহমান জানান,আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং শনিবার সকালে আইনি প্রকৃিয়া শেষ করে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।