সাগর-রুনি হত্যা মামলা: সাবেক বিচারপতি মানিককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইলকে তদন্তের স্বার্থে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে, যেখানে মামলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) জানিয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

আদালতের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদ
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন।

এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম আবেদন মঞ্জুর করেন এবং সেই অনুযায়ী জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

তদন্ত কর্মকর্তার মতে, শামসুদ্দিন মানিক এবং মোহাম্মদ সোহাইল সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, যা বর্তমানে যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া, হাজতী আসামি এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবীরকেও একদিনের জন্য জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সাগর-রুনি হত্যা মামলা: ১২ বছরেও সমাধান হয়নি
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন।

এই ঘটনায় নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শুরুতে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ এই মামলার তদন্ত করলেও, পরে তদন্তের দায়িত্ব ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‌্যাবের (র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তবে এক যুগ পেরিয়ে গেলেও মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।

টাস্কফোর্সের নতুন তদন্ত উদ্যোগ
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে র‌্যাবের কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে টাস্কফোর্সের হাতে দেওয়া হয়।

এপ্রিল মাসে টাস্কফোর্স তাদের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিহত রুনির ভাই নওশের আলম বলেন, আমি ন্যায়বিচার চাই। টাস্কফোর্স যেন সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন দেয়, সেটাই আমার প্রত্যাশা।

তদন্তে ১১৫ বার সময় বৃদ্ধি
মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় এ পর্যন্ত ১১৫ বার সময় নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু তদন্ত সংস্থা তা জমা দিতে ব্যর্থ হয়।

এ কারণে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমান নতুন তারিখ নির্ধারণ করে ২ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের সময় দিয়েছেন।

হাইকোর্টের কড়া বার্তা
মামলা তদন্তের ধীরগতি নিয়ে উচ্চ আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শুনানির সময় হাইকোর্ট বলেন, আশা করি এবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং তদন্তের জন্য দেওয়া ছয় মাস মানে ছয় মাসই হবে।

এ বিষয়ে আগামী ৬ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

তথ্যসূত্র: বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *