নিজস্ব প্রতিনিধি: গতকাল রবিবার, উত্তরা এলাকার জারমান হোমিও প্রতারণা সংক্রান্ত একটি মামলার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত আজহারউদ্দিন হঠাৎ করে বসিয়ে রেখে পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টির গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করেছে।
প্রাথমিকভাবে, আজহারউদ্দিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, “এই পুরো অভিযোগটি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার সাবেক স্ত্রী আমাকে ফাঁসানোর জন্য জাল সিগনেচার ব্যবহার করেছে।” তিনি আরও বলেন, “মামলা চলমান রয়েছে, আমি আদালতে বিষয়টি ব্যাখ্যা দেব।” এরপর তিনি পাশের রুমে যাওয়ার কথা বলে, পিছনের দরজা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। তার পরপরই তাকে খোঁজার চেষ্টা করা হলেও, কোনো হদিস মেলেনি।
পালানোর পর, আজহারউদ্দিনের স্ত্রী ১৩ নাম্বার সেক্টর উত্তরা কল্যাণ সমিতির অফিসে উপস্থিত হয়ে লিখিত বক্তব্য এবং ভিডিও বক্তব্য প্রদান করেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি এজহার দায়ের করেছিলেন, যার মামলা নম্বর ১৮(১২)২০১৭। এই মামলায় অভিযোগ রয়েছে – ৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ দণ্ডবিধি। এর পাশাপাশি, আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এ সময়, মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ লোকমান এবং ঢাকা জেলা আইন সহায়তা ফাউন্ডেশনের প্রধান আইন উপদেষ্টা মোঃ রেদওয়ানুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, দুই পক্ষের মধ্যে একটি আপোষনামা সম্পাদন করা হয়েছে। এই আপোষনামার শর্তে বলা হয়েছে যে, উভয় পক্ষ তাদের মামলাগুলি থেকে খালাস পেতে একে অপরকে সহযোগিতা করবে এবং কোনো পক্ষই আপত্তি জানাবে না।
আপোষনামা নিম্নে দেওয়া হলো:
পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তা’আলার নাম স্মরণ করিয়ে এই আপোষনামার বয়ান আরম্ভ করছি যে, আমি ১ম পক্ষ ২য় পক্ষের বিরুদ্ধে বিগত ০৯/১২/২০১৭ ইং তারিখে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি এজহার দায়ের করি, যার মামলা নং- উত্তরা পশ্চিম থানার মামলা নং-১৮(১২)২০১৭, ৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ দণ্ডবিধি, যা বর্তমানে বিজ্ঞ অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আদালত নং-২, ঢাকায় বিচারাধীন আছে এবং বিজ্ঞ ৬ষ্ঠ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা, দায়রা মামলা নং-৭৯৭৪/১৯, ধারা-এন.আই. অ্যাক্টের ১৩৮, যা বিচারাধীন আছে এবং ২য় পক্ষ মোঃ আজহার উদ্দিন ১ম পক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন, যার দায়রা মামলা নং-৫৭১/২০১৯, যা অতিরিক্ত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, গাজীপুরে বিচারাধীন আছে। উপরোক্ত মামলাগুলি বিষয়ে উভয়পক্ষের আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে নিম্নলিখিত শর্তসমূহ মান্য করে এই আপোষনামা সম্পাদন করলাম।
আপোষনামার শর্তসমূহঃ
১। ১ম পক্ষ কর্তৃক দায়েরকৃত উত্তরা পশ্চিম থানার মামলা নং-১৮(১২)২০১৭, ধারা-৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ দণ্ডবিধি, যা বর্তমানে বিজ্ঞ অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আদালত নং-২, ঢাকায় বিচারাধীন আছে এবং বিজ্ঞ ৬ষ্ঠ যুগ্ম দায়রা জজ আদালত, ঢাকা, দায়রা মামলা নং-৭৯৭৪/১৯, এন.আই. অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা। উক্ত দুটি মামলাতেই ২য় পক্ষ খালাস বা অব্যাহতি পেলে ১ম পক্ষের কোনো আপত্তি থাকবে না এবং ১ম পক্ষ মামলা থেকে খালাস বা অব্যাহতি পেতে সার্বিক সহযোগিতা করবেন এবং ২য় পক্ষ ১ম পক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দায়রা মামলা নং-৫১৭/২০১৯, অতিরিক্ত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, গাজীপুরে বিচারাধীন, যদি ১ম পক্ষ খালাস পান, তবে ২য় পক্ষের কোনো আপত্তি থাকবে না এবং ২য় পক্ষ মামলা থেকে খালাস বা অব্যাহতি পেতে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
যে উল্লিখিত মামলাগুলি থেকে উভয়পক্ষ আদালত থেকে খালাস পাবেন, সে বিষয়ে উভয়পক্ষ সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করবেন।
এদিকে, উত্তরা থানায় চলমান মামলা এবং অন্যান্য আইনগত পদক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এই ঘটনার পর সবার নজর এখন আইনগত ফলাফল এবং আজহারউদ্দিনের পালিয়ে যাওয়ার রহস্যের দিকে।