সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের রসদ সরবরাহকারী রাধুনি হাবিব ভোল পাল্টিয়ে এখন বিএনপি নেতা!

নিজস্ব প্রতিনিধি : ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের রসদ সরবরাহকারী হিসাবে পরিচিত গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বোর্ড বাজারের বাংলার রাধুনি ও লবঙ্গ রেষ্টুরেন্টের মালিক হাবিবুর রহমান। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন মন্ডলের ব‍্যবসায়িক পার্টনার এই হাবিব।

যখন যাকে প্রয়োজন ঠিক তখনই তার নাম ভাঙিয়ে চলতো রাধুনী ও লবঙ্গ হোটেলের মালিক হাবিব। গাজীপুরে থেকে বাদ পরেননি সাবেক যুবলীগ এর আহবায়ক রাসেল সরকার, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সবার সাথেই ছবি তুলে মানুষকে ভয় ভীতি দেখিয়ে চলতো হাবিব। এখানেই শেষ নয় তার শ্বশুর ছিল র‍্যাব এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা শ্বশুরের মাধ্যমে গুম, হত‍্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করতেন এই হাবিব। হাবিবের ইশারায় চলতেন তার শ্বশুর। একদিকে শ্বশুর অন্যদিকে স্থানীয় ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক লোক এই দুইয়ের সমন্বয়ে দুর্দমনীয় হাবিব। রাজস্ব কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরের লোকজন তার কাছে ছিলেন অসহায়।

গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে বাংলার রাধুনি রেস্তোরাঁয় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাধুনি হাবিবের নিজের বর্ণনা অনুযায়ী রেস্তোরাঁয় কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা না ঘটলেও র‍্যাবের ভয়ভীতি ও ফ‍্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের উপর্যুপরি চাপের কারণে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ না থাকার পরেও রাধুনি হাবিবকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বাংলাদেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি।

গত ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় নারী ব‍্যবসা, অর্থ আত্মসাতসহ অসংখ্য অপরাধের হোতা এই রাধুনি হাবিব। সামান্য হোটেল বয় থেকে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এখন প্রায় শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া হাবিব ফ‍্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর হওয়ায় এযাবৎ কাল পযর্ন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকেও হাবিবের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যারাই হাবিবের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অথবা র‍্যাব দিয়ে গুম ও হত‍্যার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করেছে। গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ ফ‍্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পরপরই ফেসবুকে স্ট‍্যাটাস দিয়ে নিজেকে বিএনপির সমর্থক হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়েছেন। বর্তমানে গাছা থানা বিএনপির অনেক নেতার সাথেই রাধুনি হাবিব সখ‍্যতা গড়ে তুলেছেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি-২৫ তারিখ সাংবাদিক সম্মেলনে ফ‍্যাসিবাদের দোসরদের সাথে বিএনপি নেতা রিপু সুলতানের উপস্থিতি স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

হাবিবের সকল অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডে প্রকাশ‍্যে মদদদাতা রাধুনি রেস্তোরাঁর ভবন মালিক আশরাফুল ইসলাম (বিকি) যিনি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বদা বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতেন। সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ফ‍্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ক‍্যামেরা বন্দী হয়েছিলেন আশরাফুল। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ফ‍্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বতর্মান অন্তবর্তীকালীন সরকার যখন দেশকে ধীরে ধীরে একটি স্থিতিশীল অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার উদ্দেশ্য এদেশের আনাচে কানাচে ঘাপটি মেরে থাকা আশরাফুল ইসলাম বিকির মতো ফ‍্যাসিবাদের দোসরদের লক্ষ্য করে গাজীপুর সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গত ৬ ফেব্রুয়ারী রাতে অডিও বার্তায় ঘোষণা দেন আমাদের কথা স্পষ্ট, যে রাজধানীতে দিনের বেলা স্বাধীনভাবে আমরা ঘুরতে পারব না, চলতে পারব না; আমাদের চূড়ান্ত ডিসিশন সেই রাজধানীতে রাতের বেলায় মানুষ ঘুমাতে পারবে না।” মূলত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ঘোষণার পরপরই গাজীপুরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে এবং সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ,ক,ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার উপর হামলা করা হয় এবং উক্ত হামলায় আবুল কাশেম নামে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হয়েছেন আরও অনেকেই আহত হয়েছেন।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার ওপর হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে না পাঠানো পর্যন্ত রাজপথে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। রাধুনি হাবিব এবং আশরাফুল ইসলামের মতো ফ‍্যাসিবাদের দোসরদের এখনই আইনের আওতায় না আনতে পারলে আগামীতে আরও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা এলাকাবাসির।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।