গাজা যুদ্ধবিরতিতে বন্দী বিনিময়: হামাস মুক্তি দিলো ৩, ইসরাইল ছাড়লো ১৮৩ ফিলিস্তিনি

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বন্দী বিনিময় চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল ও হামাস। শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) হামাস তিনজন ইসরাইলি বন্দী মুক্তি দিয়েছে, যার বিপরীতে ইসরাইল ১৮৩ ফিলিস্তিনি বন্দী ছেড়ে দিয়েছে।

ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি: ৪৯১ দিন পর পরিবারের কাছে ফেরা
শনিবার সকালে ইলি শরাবি, ওহাদ বিন আমি ও ওর লেভিকে রেড ক্রসের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। পরে তারা ইসরাইলে ফিরে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন।

শরাবির পরিবার, যারা যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন, তার অত্যন্ত ক্ষীণ ও দুর্বল চেহারা দেখে হতবাক হন এবং তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ বলেন, ৪৯১ দিন নরকযন্ত্র ভোগের পর তারা ফিরেছে, অনাহারে, কষ্টে ও দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায়।

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের বন্দী ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে বলেন, আমরা আবারও দেখলাম হামাস কেমন আচরণ করেছে। তারা সম্পূর্ণ অমানবিক।

ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি: উষ্ণ সংবর্ধনা ও চিকিৎসার দাবি
এদিকে, মুক্তি পাওয়া ১৮৩ ফিলিস্তিনি বন্দী অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় উষ্ণ সংবর্ধনা পেয়েছেন। বন্দীদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাদের অনেকেই গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন অনুভব করছেন।

ফিলিস্তিনি বন্দীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স ক্লাব জানিয়েছে, ৭০ জনের বেশি বন্দী দীর্ঘমেয়াদি বা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন এবং ১১১ জন গাজায় আটক ছিলেন।

সংগঠনটির কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল-জাগারি বলেন, আজ মুক্তি পাওয়া প্রতিটি বন্দিই দীর্ঘদিনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।

যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ: আরও ১,৯০০ বন্দী বিনিময়ের পরিকল্পনা
এ পর্যন্ত চলমান যুদ্ধবিরতিতে ২১ জন ইসরাইলি ও ৫৬৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পেয়েছে।

আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় শেষ হলে আরও ৩৩ জন ইসরাইলি বন্দী ও ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে ইসরাইল জানিয়েছে, ওই ৩৩ জনের মধ্যে ৮ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।

বন্দী বিনিময়ের মুহূর্ত: কড়া নিরাপত্তায় ছাড়পত্র
শনিবার বন্দী বিনিময়ের সময় গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় সশস্ত্র যোদ্ধাদের উপস্থিতি দেখা যায়।

একটি মঞ্চে হামাস কর্মকর্তা ও রেড ক্রস প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিক নথিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর বন্দীদের তুলে দেওয়া হয়, যেখানে সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাদের ঘিরে রেখেছিল।

যুদ্ধ ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণের মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূচনা হয়, যেখানে ১,২০০ ইসরাইলি নিহত এবং ২৫১ জনকে বন্দী করা হয়।

অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইসরাইলি অভিযানে এ পর্যন্ত ৪৭,৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার দুই-তৃতীয়াংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে সেখানে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন।

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’তে পরিণত করতে পারে।

তবে এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

তথ্যসূত্র: বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।