অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে বেক্সিমকোর ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ: পর্যালোচনা কমিটির রিপোর্ট

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের মোট ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই। এই অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় কমিটির অন্যান্য সদস্য, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।

শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সজাগ
ড. সাখাওয়াত জানান, বেক্সিমকো গ্রুপের চলমান আর্থিক সংকট ও শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১২টি ফ্যাক্টরি লে-অফ করা হয়েছে, যা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। তিনটি ফ্যাক্টরি বর্তমানে চালু আছে। তবে ১৬টি ফ্যাক্টরির অস্তিত্বই নেই, যার বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকেরই পাওনা ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।

শ্রমিকদের আন্দোলন ও প্রশাসনের অবস্থান
গত ২১ জানুয়ারি, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক-কর্মচারীরা গাজীপুরের শ্রীপুরে সমাবেশ করে ফ্যাক্টরি পুনরায় চালুর দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি দেন, দাবিগুলো না মানা হলে মহাসড়ক অবরোধসহ শাটডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

ড. সাখাওয়াত বলেন, “তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন এবং অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক। তবে আমরা শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় সচেষ্ট রয়েছি। আগামী ২৮ জানুয়ারি দায়-দেনা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।

অশান্ত পরিস্থিতি ও দায়ীদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন যে, শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় ১০০টিরও বেশি বাস পোড়ানো হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তিনি এ ঘটনাকে শ্রমিক নেতাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করেন।

এমন আচরণ আগে কখনো দেখা যায়নি। কেন এমন হলো, তা আমরা তদন্ত করে বের করব,” বলেন তিনি।

সরকারি অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শ্রম উপদেষ্টা পরিষদ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে সম্পদ নষ্ট করে কোনো দাবিই মানা সম্ভব নয়।

উপসংহার
বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ফ্যাক্টরির নামে নেওয়া বিশাল ঋণের তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকারের তৎপরতা বেড়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *