চ্যানেল7বিডি ডেক্স: ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে আটক থাকা বিডিআরের ১৬৮ জন সদস্য অবশেষে কারামুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাদের মুক্তি কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪১ জন, কাশিমপুর-১ থেকে ২৬ জন, কাশিমপুর-২ থেকে ৮৯ জন এবং কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ১২ জনসহ মোট ১৬৮ জন মুক্তি পেয়েছেন।
আদালতের রায় ও মুক্তির প্রক্রিয়া
গত ২১ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া বিস্ফোরক মামলায় জামিনপ্রাপ্ত ১৭৮ জন আসামির নাম ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে ১৬৮ জনের তালিকা কারা কর্তৃপক্ষ হাতে পায় এবং মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ঘটনাপ্রবাহ
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআরের সদর দপ্তরে বিদ্রোহের সময় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার সম্পন্ন হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর।
রায়ের প্রধান দিকগুলো:
১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড
১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড
২৭৮ জন খালাসপ্রাপ্ত
আপিল এবং বিচার-পরবর্তী পরিস্থিতি
২০১৭ সালে হাইকোর্ট হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় প্রদান করে। সেখানে:
১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল
১৮৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
২৮৩ জনের খালাস
তবে, মামলার রায় কার্যকরের আগে ৫৪ জন আসামি মৃত্যুবরণ করেন। ফলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল করেন এবং রাষ্ট্রপক্ষ ৮৩ জন খালাসপ্রাপ্ত আসামির রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দাখিল করে।
বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ ও স্থগিত অবস্থা
বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে ২০১০ সালে বিচার শুরু হলেও রাষ্ট্রপক্ষের অগ্রাধিকার দেয়ার কারণে বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। হত্যা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের পর বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম ঝুলে যায়।
পুনঃতদন্তের দাবি
ক্ষমতার পালাবদলের পর পিলখানা হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের দাবি ওঠে। ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর, সরকার একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।
সমাপ্তি
১৬ বছর পর কারামুক্ত বিডিআর সদস্যদের মুক্তি এনে তাদের দীর্ঘ কারাবাসের অধ্যায় শেষ হলো। তবে এই মর্মান্তিক ঘটনার বিচার ও সংশ্লিষ্ট আপিলগুলো এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।