দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে

নিউজ ডেক্স: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের প্রেক্ষাপটে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএনপি এবং এর সমমনা জোট ও অন্যান্য দলগুলোর পাশাপাশি সিপিবি, বাম জোটসহ অন্তত ৪৮টি রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি জানাচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বিবৃতি আসছে যে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব।

সম্প্রতি চীন ও সিঙ্গাপুরের কূটনীতিকরা ঢাকায় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সময়ে, গত বৃহস্পতিবার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। উভয় দেশ দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক চাপ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেছেন, আমেরিকা ও ভারত বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চায়। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন শেষে দেশটি একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে সক্ষম হবে। এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের ফলে নির্বাচনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা আরও ত্বরান্বিত হবে।

অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী মন্তব্য করেন, নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের দাবি যৌক্তিক হলেও প্রাথমিক সংস্কারগুলো সম্পন্ন হওয়া জরুরি। তিনি মনে করেন, ডিসেম্বর বা আগামী ফেব্রুয়ারির আগে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন হবে না।

বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত। একইসঙ্গে, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্নের পরই নির্বাচনের কথা বলছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের ভূমিকা
নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বিএনপি এবং অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত
সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। তবে বাংলাদেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে তাদের বক্তব্য বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকারের নির্বাচনী প্রস্তুতির বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর সক্রিয় আন্দোলন না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

উপসংহার
দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দলগুলো এবং আন্তর্জাতিক মহল থেকে আসা চাপ ক্রমশই বাড়ছে। তবে প্রাথমিক সংস্কার এবং নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। দিন যতই এগোচ্ছে, দ্রুত নির্বাচনের দাবি ততই জোরালো হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।