সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ: নতুন দিগন্তের পথে বাংলাদেশ

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: সংবিধান সংস্কার কমিশন আজ তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। কমিশনের এই প্রস্তাবনায় গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাতটি প্রধান বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটির একটি সারসংক্ষেপ কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান সুপারিশসমূহ

সংবিধানের নতুন মূলনীতি
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনার ভিত্তিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা
প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

সংসদীয় কাঠামোর সংস্কার
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে থাকবে একটি জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং একটি সিনেট (উচ্চকক্ষ)।
উচ্চকক্ষ ১০৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে, যার মধ্যে ১০০ জন নির্বাচিত হবেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী।

তরুণ নেতৃত্বের উৎসাহ
সংসদীয় আসনের ন্যূনতম ১০% তরুণ প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের বয়সসীমা ২১ বছর নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ
হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসহ প্রতিটি বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী আসন স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাজধানীতে থাকবে এবং বিচার বিভাগে পূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হবে।

নতুন অধিকার সংযোজন
খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, ইন্টারনেট, ভোটাধিকার, তথ্যপ্রাপ্তি, গোপনীয়তা রক্ষা, ভোক্তা সুরক্ষা, শিশু উন্নয়ন, বিজ্ঞান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রবর্তন
নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং তার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সংসদীয় সংস্কারের সুপারিশ
সংসদ সদস্যরা একাধিক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না।
অর্থবিল ছাড়া সদস্যরা তাদের দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা পাবেন।
স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধীদলীয় সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

জাতীয় কমিটমেন্ট
কমিশনের সুপারিশে সংবিধানের প্রস্তাবনা পরিবর্তন করে নতুন ভাষ্য সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেতনা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন জমা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আজ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের গঠন ও কার্যক্রম
২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর অধ্যাপক আলী রীয়াজকে প্রধান করে গঠিত এই কমিশন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। চলতি মাসে কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।

প্রতিবেদনটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে গণতন্ত্র ও জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার প্রত্যাশা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *