অনলাইন ডেক্স: ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন, যা একসময় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনচিত্র ধারণ করত, এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। ভবনটিতে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই ভবনে আগুন দেয়। ভবনের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ স্মৃতিচিহ্ন ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের চিহ্নসমূহ ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে।
ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের সব প্রবেশপথের লোহার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সামনের দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। তিনতলা ভবনের বাইরের দেয়ালে ধ্বংসের চিহ্ন স্পষ্ট। ভেতরের বাগানবিলাস গাছগুলোতে নতুন পাতা ও ফুল ফুটলেও ভবনের ভগ্নদশা দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
স্মৃতি জাদুঘরের গেট সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও আর নেই। লেক-সংলগ্ন বড় ভাস্কর্যটি ধ্বংস হয়ে গেছে, কেবল বেদিটি কোনো রকমে টিকে আছে। বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের ফুটপাতে একটি বড় লোহার কনটেইনারে কিছু প্লাস্টিকের চেয়ারসহ অন্যান্য জিনিস রাখা রয়েছে, যা হয়তো লুটপাট থেকে রক্ষা পেয়েছে অথবা পরে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত ভবন
ভবনের নিরাপত্তার জন্য দিনরাত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবনের সামনে পালাক্রমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে ধ্বংসযজ্ঞের চার মাস পরও ভবনের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মেলেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, জাদুঘরের ভেতরে তলাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সিঁড়ি থেকে শুরু করে দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, ১৫ আগস্টের ঐতিহাসিক ছবি, বই এবং তথ্যচিত্র—সবকিছুই ভেঙে ফেলা হয়েছে বা লুটপাট হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়ি থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন চালিয়েছিলেন এবং এখানেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৯৯৪ সালে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভবনটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনিশ্চিত
বঙ্গবন্ধু ভবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাস্ট বা অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয়। এদিকে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করেছে। জানা গেছে, ট্রাস্টে অর্থ দাতাদের পরিচয় এবং ওই অর্থের ব্যবহার নিয়ে তদন্ত চলছে।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত এই ভবনের বর্তমান অবস্থা শুধু ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং বর্তমান পরিস্থিতির একটি করুণ প্রতিচ্ছবি।