ডাক্তার না হয়ে ও সকল রোগের চিকিৎসা করেন নাজমুল হোসেন

গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলা রাজেন্দ্রপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট নাজমুল হোসেন দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ডাক্তার না হয়েও সকল রোগের চিকিৎসা করে রোগীদের পকেট কাটছেন ডাক্তার হিসেবে। সরকারি সীলও ব্যবহার করছেন। ডাক্তার না হয়েও রাজেন্দ্রপুর বাজারে খান ফার্মেসিতে চেম্বার খুলে নিয়মিত দেখেন রোগী ও দিয়ে থাকেন ব্যবস্থাপত্র। ফার্মাসিস্ট হলেও রাজেন্দ্রপুর বাজার এবং সরকারি হাসপাতালে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন ‘ফার্মাসিস মোঃ নাজমুল ।’ রাজেন্দ্রপুর সরকারি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিক্যাল অফিসার না থাকায় রোগী দেখার বিষয়টি জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

সরেজমিনে রাজেন্দ্রপুর বাজারে খান ফার্মেসী চেম্বারে প্রবেশ করে দেখা যায় বেশ কয়েকজন রোগী অপেক্ষমান রয়েছেন। যাদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট মোঃ নাজমুল হোসেন। দেখছেন রোগীর পরীক্ষার রিপোর্টও। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে বিষয়টি জটিল হিসেবে দেখছেন না ফার্মাসিস মোঃ নাজমুল হোসেন।

সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সাথে কথা বলে জানাযায়, “আমার জ্বর আর প্রচণ্ড গলা ব্যথা। তাই ফার্মাসিস মোঃ নাজমুলকে দেখিয়েছি। তিনি প্রথমে রক্ত পরীক্ষা করতে দিলেন। তারপর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছেন।

তিনি তো ডাক্তার নন, তিনি একজন ফার্মাসিস্ট। তার কাছে কেন চিকিৎসা নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন বিষযটি আমার জানা নেই, আমরা তাকে ডাক্তার বলেই জানি, তিনি ১০০ টাকা করে ভিজিট নেন।

এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো এক ব্যক্তি জানান, ফার্মাসিস তাদের বাজারের চেম্বারে থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখেন। তার বেশিরভাগ রোগী অশিক্ষিত-অসহায় মানুষগুলো। ওই মানুষগুলোর অজ্ঞতাকে পুঁজি করে ডাক্তার না হয়েও তাদের কাছে ডাক্তার বাবু সেজেছেন। পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে তাদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। আশপাশের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ মোঃ নাজমুল বাবুকে ডাক্তার হিসেবেই চেনেন। মূলত তিনি ডাক্তার নন, তিনি একজন সরকারি হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট।

তার কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রোগী দেখে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তবে, অফিস সময়ে রোগী দেখে কোনো ভিজিট নেন না বলে দাবি করেন তিনি।

ফার্মাসিস্ট হয়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন কি/ না? এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে কর্তৃপক্ষের আদেশেই বাড়িতে রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানান ফার্মাসিস নাজমুল।

নাজমুল এর কথার সূত্র ধরে কর্তৃপক্ষের আদেশে বাড়িতে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিষিয়টি অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১২ জুলাই তৎকলীন গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত একটি পত্রে রাজাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের রাজেন্দ্রপুর উপ-স্বাস্হ্য কেন্দ্রের রোগীর চিকিৎসাসেবা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। একজন ফার্মাসিস্টকে সরাসরি চিকিৎসাসেবার আদেশ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, এর আইনগত বৈধতাও নেই। এছাড়া তাকে রাজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের রাজেন্দ্রপুর উপ-স্বাস্হ্য কেন্দ্রের রোগীকে ঔষধ দেয়ার জন্য পারমিশন দেয়া ছিল। রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসিনা মমতাজ বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ারপর বিষয়টি অবগত ছিলামনা। এখনও যেহেতু জানতে পারেছি আমি উপর মহলে কথা বলে বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখানে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগের ব্যাপারে কথা বলবো।

গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন মোসাঃ মাহমুদা আক্তার, এমন বিষয় এর আগে কেউ আমাকে জানায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বলেন, ফার্মাসিস্টদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ডাক্তার না হয়েও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া এবং দীর্ঘদিন কর্মস্থলে আলাদা চেম্বার বিষয়টি থাকার বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com