ঢাকায় ঘরের বাতাসে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি: গবেষণার চাঞ্চল্যকর তথ্য

অনলাইন ডেক্স: রাজধানী ঢাকায় বাহিরের বায়ুদূষণের পাশাপাশি ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরের দূষিত বাতাসের ফলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, কম ওজনের শিশু জন্ম, মস্তিষ্ক বিকাশের বাধা, মানসিক স্বাস্থ্য অবনতি এবং অকাল মৃত্যুর মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিশেষত শিশু, প্রবীণ এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এ ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন।


গবেষণার প্রধান তথ্য: সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং এয়ার কোয়ালিটি, ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড হেলথ (এএসিএইচ) ল্যাবের প্রধান ড. সাখাওয়াত হোসেন এসব তথ্য তুলে ধরেন।

সম্প্রতি ইনডোর এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় ঢাকার ৪৩টি ঘরের ভেতরের বায়ুর মান পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, ঘরের ভেতরের গড় পিএম-২.৫ মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৫.৬৯ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মানের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। কিছু ঘরে এ মাত্রা ২০০ মাইক্রোগ্রামেরও বেশি ছিল।


বায়ুদূষণের উৎস: গবেষণায় ঘরের দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে:

বাইরের দূষিত বায়ুর প্রবেশ: প্রায় ৪০% দূষণ বাইরের বাতাসের মাধ্যমে ঘরে ঢোকে।
রান্না: রান্নার সময় ঘরের ভেতরে পিএম-২.৫ মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, বিশেষত যখন রান্নার সময় দেড় ঘণ্টার বেশি হয়।
পরিচ্ছন্নতার অভাব: যারা নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করেন না, তাদের ঘরে দূষণের মাত্রা তুলনামূলক বেশি।

পরামর্শ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: ড. সাখাওয়াত বলেন, “২০১৯ সালের স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের প্রতিবেদন অনুসারে, ঘরের বায়ুদূষণ বাংলাদেশের চতুর্থ প্রধান মৃত্যুঝুঁকি, যা প্রতিবছর ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটায়।”

তিনি আরও বলেন: বায়ু চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়ন: ঘরের জানালা ও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
পরিবেশবান্ধব রান্না: উন্নতমানের চুলার ব্যবহার নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হবে।
সচেতনতা বৃদ্ধি: গৃহস্থালি বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন।

গবেষক আফসানা ইয়াসমিন যোগ করেন, “যখন বাইরের দূষণ বেশি থাকে, তখন জানালা বন্ধ রাখা বা এসি ব্যবহার করা যেতে পারে। রান্নার সময় যথাযথ ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করাও গুরুত্বপূর্ণ।”


গুরুত্বপূর্ণ বার্তা: ঢাকার ঘরের বায়ুদূষণ একটি নীরব স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জরুরি। ঘরের ভেতরের দূষণ কমাতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোই হতে পারে এ সংকটের কার্যকর সমাধান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।