নিজস্ব প্রতিবেদক: সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনার জন্য গণফোরামের সভাপতি ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় যমুনায় গণফোরামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ প্রস্তাবনার আহ্বান জানান। বৈঠকের পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডা. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, গণফোরাম প্রধান উপদেষ্টাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে। বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তাড়াহুড়ো না করে যৌক্তিক সময় নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে গণফোরাম। তারা পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনের জন্য সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রস্তাব উপস্থাপন করবে বলেও জানান।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে গণফোরাম ২০টি দাবি উত্থাপন করেছে। এসব দাবির মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দলগুলোর প্রস্তাবনার ভিত্তিতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবেন। এই রূপরেখায় সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তাও জানা যাবে।
রূপরেখা সংস্কার নাকি ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাহফুজ আলম বলেন, এতে উভয় বিষয় থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা মূলত সংস্কারের রূপরেখা দেবেন, যেখানে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এর আগে, বিকেলে ড. কামালের নেতৃত্বে গণফোরামের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল যমুনায় যান। তারা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিচারের দাবি জানিয়ে তাদের নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (আম্বিয়া) বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছে।
এদিকে, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ এখনও চাঁদাবাজ মুক্ত নয়। প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করলে একটি পরিচ্ছন্ন দেশ পাওয়া যাবে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা অত্যন্ত জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার এখনও বিপদমুক্ত নয় এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী দেশের শত্রুদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। তিনি সকল পর্যায়ের নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার দাবি জানান এবং দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান।
আজ প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক শুরু করেন। প্রথমে ৭টি ইসলামিক দল অংশ নেয়, এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামি আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাংলাদেশ জাসদ ও ১২ দলীয় জোটও বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, সংস্কার এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। বৈঠক রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, তারা দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন এবং প্রধান উপদেষ্টা এই মতের সঙ্গে একমত হয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১২ ও ১৩ আগস্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করেন। তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ছিল দ্বিতীয় দফার বৈঠক।