স্টাফ রিপোর্টার : মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গাজীপুর চৌরাস্তা শাখায় ২০১৪ সালে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন মির্জা ইয়াহিয়া বাবু। বর্তমানে তিনি একই ব্যাংকের উত্তরা গরীবে নেওয়াজ রোড শাখায় ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। ব্যাংক ম্যানেজার থেকে ভূমিদস্যু হয়ে ওঠার ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধানে নামেন প্রতিবেদক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুরে কর্মরত অবস্থাতেই কাপাসিয়া এলাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ব্যাংক ম্যানেজার মির্জা ইয়াহিয়া বাবু। অপরাধ করেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা এবং সমাজে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য চতুর এই ম্যানেজার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের সাথে সক্ষতা গড়ে তোলেন।
এরই মধ্যে ব্যাংক ম্যানেজার মির্জা ইয়াহিয়া বাবু’র সাথে পরিচয় হয় কানাডা প্রবাসী মিজানুর রহমান মানিকের সাথে। ম্যানেজারের সুন্দর আচরনে মুগ্ধ হয়ে তার সমস্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম, অর্থনৈতিক লেনদেন ও অন্যান্য সকল জমিজমা বিষয়ক কার্যক্রম ব্যাংক ম্যানেজার মির্জা ইয়াহিয়া বাবুকে দিয়েই পরিচালনা করার চিন্তা ভাবনা করেন।
কানাডা প্রবাসী মিজানুর রহমান মানিক তার পরিবারের সাথে কথা বলে ব্যাংক ম্যানেজার বাবুর উপর বিশ^াস স্থাপন করে তারই মাধ্যমে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গাজীপুর শাখায় ২০১৬ সালে যথাক্রমে মেসার্স তন্নী এন্টারপ্রাইজ ও ঝঅ ঞঅঘঘও জঅতট ঔঠ নামে দুটি চলতি হিসাব খোলেন। এরপর দুটি একাউন্টের মাধ্যমে কানাডা প্রবাসী মানিক তার ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে এক কোটি বিশ লক্ষ টাকার লোন, পরবর্তীতে আবারও ষাট লক্ষ টাকার লোন এবং একটি কার লোন গ্রহন করেন। এরপর যথারীতি লোনগুলো পরিশোধও করেন প্রবাসী মানিক কিন্তু ব্যাংক থেকে নেয়া লোনের বিপরীতে যেই সিকিউরিটি চেকগুলো ম্যানেজারের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন সেগুলো আর ফেরৎ পাননি মিজানুর রহমান মানিক।
চেকগুলো ম্যানেজারের কাছ থেকে ফেরৎ চাইলে প্রশাসনিক ডন খ্যাত ডিবি প্রধান হারুনের ভয় দেখাতে থাকেন চতুর ম্যানেজার মির্জা ইয়াহিয়া বাবু। মিজানুর রহমান মানিক কানাডা প্রবাসী হওয়ায় তার মালিকানা এক একর ঊনষাট শতক জমি আম মোক্তার করে নিজের নামে লিখিয়ে নেন ভদ্রবেশী চতুর ব্যাংক ম্যানেজার বাবু। এরপরেও একাধিকবার গচ্ছিত রাখা স্বাক্ষর করা চেক বইসহ জমিজমার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ম্যানেজারের কাছে চাইলে ব্যাংক ম্যানেজার বাবু চেক হারিয়ে গেছে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, খোঁজ করে দেখবে বলে বিভিন্ন ধরনের তাল-বাহানা করতে থাকেন। পরবর্তীতে স্বাক্ষর করা চেকবই ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ফেরৎ দেয়ার জন্য চাপ দিলে ব্যাংক ম্যানেজার বাবু ডিবি প্রধান হারুনের ভয় দেখান, গুম করে ফেলার হুমকিও প্রদান করেন এই ব্যাংক ম্যানেজার বাবু। এবিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন কানাডা প্রবাসী মিজানুর রহমান মানিক।
উল্লেখ্য, ব্যাংক ম্যানেজার বাবু ২০১৭ সাল থেকে ডিবি প্রধান হারুনের অর্থ সম্পাদক হিসেবে এবং হারুনের জমি কেনা-বেচা করার দালাল হিসেবে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাংক ম্যানেজার বাবু ডিবি প্রধান হারুনের প্রভাব দেখিয়ে নিজেও অঢেল সম্পদ গড়ে তোলে। অনুসন্ধানে বেঁড়িয়ে আসে এই অসাধু ব্যাংক ম্যানেজার বাবুর অবৈধ সম্পদের তালিকা। এর মধ্যে রয়েছে, ১) পাবনা জেলার কাশিনাথপুরে বুশরা ডেইরী ফার্ম নামে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার প্রকল্প। ২) পাবনা সদরে ৮ কাঠা জমির উপর ৬ তলা বাড়ি। ৩) গাজীপুর ভাওয়াল বদ্রে আলম কলেজের পূর্বপাশের্^ প্রধান সড়কের উপর ৩ কাঠা জমির প্লট যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকারও বেশি। ৪) কাপাসিয়ায় পাপোড় সরকার বাড়ী এলাকায় প্যারাগন ডেনিম ফেক্টরীর পাশে ৬ বিঘা জমির উপর হরিনের খামার সহ বিশাল রিসোর্ট। তাছাড়াও ম্যানেজার বাবুকে দেয়া কানাডা প্রবাসীর আম মোক্তার নামা বাতিল করার পরেও প্রবাসী মানিকের ৬ বিঘা জমির দেয়াল ভেঙ্গে জোড় পূর্বক রিসোর্ট তৈরী করে। ৫) উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পে সেক্টর ১৬তে লেক ড্রাইভ রোডে ৩ কাঠার দুটি জোড়া প্লটও বিদ্যমান। ৬) সেক্টর ১১ এর ৭নং রোডের ৪০নং বাড়িতে নীচতলার ফ্ল্যাটটিতে তার নিজের অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন। ব্যাংকের কাজ শেষে একানে বসেই জমির দালালির কাজ করেন ম্যানেজার বাবু। বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে এই বিল্ডিংয়ের ২টি ফ্ল্যাটও তিনি দুটি ভিন্ন নামে ক্রয় করেছেন। ৭) সেক্টর ১১ এর ১নং রোডের ২৩নং বাড়িটির ৭তলায় ২২০০ স্কয়ার ফুটের একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে ম্যানেজার বাবুর নামে। গভির অনুসন্ধানে কেঁচো খুরতে সাপও বেড়িয়ে আসতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ভূমি দস্যুতার পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেও ম্যানেজার বাবু একধাপ এগিয়ে। কিছুদিন আগে কানাডা প্রবাসী মিজানুর রহমান মানিকের কাছ থেকে জমি কিনে দেয়ার কথা বলে ২৮ লক্ষ টাকা নিয়ে যায় এবং কাপাসিয়ার পাপোড় সরকার বাড়ী এলাকায় গিয়ে ফিল্মি স্টাইলে জমির মালিকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ২ বিঘা জমি প্রশাসনিক ডন খ্যাত ডিবি হারুনের এক আত্নীয়ের নামে লিখিয়ে নেয় এই ম্যানেজার বাবু। এছাড়ায় ব্যাংক ম্যানেজার বাবুর আরও অনেক অপরাধ অনুসন্ধান করলে বেড়িয়ে আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
কানাডা প্রবাসী মিজানুর রহমান মানিক বর্তমানে তার অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রশাসন, দুদক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আবেদন করেছেন।