সুনামগঞ্জের তিন শহীদের পরিবার সন্তুষ্ট শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে 

বাসস : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তুষ্ট সুনামগঞ্জের তিন শহীদ পরিবারের স্বজনেরা। শহীদের পরিবারের সদস্যরা রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। 

গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে শেখ হাসিনার পাশাপাশি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও একই সাজা দিয়েছেন। 

গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।

রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণঅভ্যুত্থানে জামালগঞ্জ গোলামীপুরের শহীদ সোহাগের ভাই বিল্লাল হোসেন সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আমরা আমাদের এক ভাইকে হারিয়েছি। 

আরেক ভাই এখনো আহত আছেন। আমি নিজেও ভাই হত্যার বিচার চেয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে রায় হয়েছে আমি এবং আমার পরিবার সন্তুষ্ট। আমরা এই রায়ের কার্যকর দেখতে চাই।

উল্লেখ্য, ২০২৪ এর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিজয় মিছিল বের হয়। 

রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বিজয় মিছিলে গোলামীপুর গ্রামের মো. সোহাগ মিয়া (২৩) ও তার ছোট ভাই শুভ মিয়া (২১) যোগ দেন। আর এই মিছিলেই পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সোহাগ।

একই দিন জেলার মধ্যনগর উপজেলার জলুষা গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র আয়াতুল্লাহ বড় ভাইয়ের সাথে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। গাজীপুরের শফিপুরে অবস্থিত আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. আয়াতুল্লাহ। 

শহীদ আয়াতুল্লাহ’র বাবা সিরাজুল ইসলাম রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আমি সন্তান হারানোর ব্যথা বুঝি। 

কেউ আমাকে বলে সান্তনা দিতে পারবে না। আমি আমার পুত্রকে হারিয়েছি। 

তিনি বলেন, হাসিনার কারণে আমার মতো হাজারো বাবা সন্তানহারা হয়েছেন। এই রায়ে আমি অনেক খুশি। 

আমি জীবদ্দশায় এই রায়ের কার্যকর দেখে যেতে চাই। 

আয়াতুল্লাহ’র বড়ভাই সোহাগ মিয়া বলেন, আমার সামনে গুলি করে আমার ছোট ভাইকে হত্যা করেছে এবং তার লাশ গুম করে ফেলা হয়। শেখ হাসিনা পলায়নের ১১ দিন পর আমার ভাইকে গ্রামে এনে দাফন করি। 

এই রায়ে আমি খুশি। রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তুষ্টি জানিয়ে সুনামগঞ্জের প্রথম জুলাই শহীদ হৃদয়ের স্ত্রী শিরিনা আক্তার বলেন, আমার দুইটি শিশু সন্তান এখনো তাদের বাবার জন্য অপেক্ষা করে। বাবা বলে কান্না করে। আমি তাদের সান্তনা দিতে পারি না। তবে এই রায় শুনে শান্তি পাচ্ছি। যার কারণে স্বামী হারিয়েছি তার বিচার দেখতে চাই। 

উল্লেখ্য, ২০ জুলাই শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হন মোহাম্মদ হৃদয় মিয়া (২৭)। তিনি ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মো. ছফেদ আলী ও মনোয়ারা খাতুনের প্রথম সন্তান ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com