রাজশাহী ৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী নাসির হোসেনকেই চায় তৃনমুল নেতা কর্মীরা  

ষ্টাফ রিপোর্টার :: বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর রাজশাহীর ৬ টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে অস্থিরতা সৃষ্টি হলেও আন্দোলন তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে রাজশাহী-৩ আসন (পবা-মোহনপুর) নিয়ে । রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি উঠেছে দলীয় নেতাকর্মীদের ভেতর থেকেই। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বিএনপির সঙ্গে জড়িত থাকলেও একই দলের একটি অংশ তাদের মেনে নিতেই নারাজ। এক্ষেত্রে রাজশাহী-৩ আসন (পবা-মোহনপুর) বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দলীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় নেতা কর্মীরা। 

বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদিন রাজশাহীর পবা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী পরির্তনের দাবি জানানো হচ্ছে বারংবার। তাদের দাবি তারা ত্যাগী প্রার্থী চান।   

অন্যদিকে ১১ই নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী রাজশাহী পরিদর্শনে আসলে পবা-মোহনপুরের অজস্র নেতাকর্মী ও সমর্থক নাসির হোসেন অস্থিরেকে এমপি হিসেবে দেখতে চান বলে স্লোগান দিতে থাকেন। 

রাজশাহী হুজরীপাড়া ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের রক্ত, ঘাম, অশ্রু মিশে আছে এই মাটিতে। সেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে বাইরের কাউকে মনোনয়ন দেয়া মানে আমাদের আত্মত্যাগের প্রতি অবজ্ঞা। আজ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যবেক্ষন করে দেখুক – মূলত শফিকুল হক মিলন রাজশাহী মহানগর কেন্দ্রীক রাজনীতি করে আসছেন। তিনি কখনই পবা মোহনপুরের তৃণমূলের নেতা কর্মীদের সাথেও ছিলেন না এমনকি পাশেও ছিলেননা। তাকে এই আসনে মনোনয়ন দেয়াটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটা কেন্দ্রের বিবেচনা করা উচিৎ।  

তবে প্রশ্ন উঠেছে তবে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন তৃনমূলের নেতাকর্মীরা কাকে চাইছেন ? এদিকে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায় , বিএনপি নেতা সাবেক (প্রয়াত) মন্ত্রী কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থিরকেই তারা স্থানীয়ভাবে এমপি হিসেবে দেখতে চান। 

অন্যদিকে ১১ ও ১২ নভেম্বর রাজশাহী হড়গ্ৰাম ইউনিয়নে পথ সভা,র‍্যালী ও বিক্ষোভ শেষে আওয়ামীলীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকা শফিকুল হক মিলনকে সুবিধাবাদী নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে রাজশাহী মতিহার থানা কৃষক দলের সদস্য সচিব আকাশ বলেন – আওয়ামীলীগের রাজশাহী মহানগরের এমন কোন নেতা নেই যার সাথে সম্পৃক্ততা ছিলোনা শফিকুল হক মিলনের। এমনকি শফিকুল হক মিলনের নেতা কর্মী যদি ১০০ জন জেল খেটে থাকে অপরদিকে নাসির উদ্দিন অস্থিরের ৩০০ জন জেল খেটেছে তার প্রমানও রয়েছে দলের কাছেই। 

এদিকে জেলা যুবদলের দলের এক নেতা বলেন – বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জননেতা তারেক রহমান এর শক্ত হাতিয়ার হিসেবে নাসির হোসেন অস্থির পরিচিত পেয়েছেন অনেক আগেই। নাসির হোসেন অস্থিরের বাবা কবির হোসেন সাবেক ভূমি মন্ত্রী থাকাকালে রাজশাহীতে ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করে গেছেন, তার উত্তরসুরি হিসেবে পবা মোহনপুর উপজেলা মডেল উপজেলা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছিলেন নাসির হোসেন অস্থির। প্রয়াত কবির হোসেন ছিলেন কেদ্রীয় বিএনপির রাজনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। 

গেল সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আন্ধার কোটা মোড়ে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের হাজারো নেতা কর্মী বলেন – রাজশাহী ৩ সদর আসনের ভোটার মিলন দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির বাইরে রয়েছেন এবং দলীয় কর্মসূচি বা আন্দোলনে তার উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ফলে তার নির্বাচনি এলাকায় তার জনসম্পৃক্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়াও নাসির হোসেন অস্থির একজন ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতা। যিনি দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন এবং আছেন সেই সাথে তৃণমূলের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। অথচ তাকে উপেক্ষা করে এমন একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে, যিনি দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে ছিলেন।  

রাজশাহী হড়গ্ৰাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ বলেন, ‘আমরা গুলির ভয় না পেয়ে, মামলা-হামলার ভয় না পেয়ে রাজপথে ছিলাম। এখন সেই ত্যাগের কোনো মূল্য নেই! দলের সুবিধাভোগীরা প্রার্থী হবে, আর আমরা কেবল হাততালি দেবো এটা মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা প্রার্থী হিসেবে নাসির উদ্দিন অস্থিরকেই চাই।  

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির ত্যাগী নেতা নাসির হোসেন অস্থির। কিন্ত বিগত ১৭ বছর দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সরব থেকে এবং অসহায় কারা নির্যাতিত নেতা কর্মীদের হামলা,মামলা, চিকিৎসা ও অসহায় পরিবারগুলোকে অভিভাবকের মত দেখা শোনা করেও কি কারনে বিএনপির ত্যাগী নেতা নাসির উদ্দিন অস্থির মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন সেটিই এখন তৃণমূলের নেতা কর্মীদের বড় প্রশ্ন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com