বিশেষ প্রতিবেদন : রাজধানীর বৃহত্তর উত্তরা সুইচগেট সংলগ্ন বিসমিল্লাহ কাঁচাবাজার আড়তে চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাজার সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, এখনো অদৃশ্যভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে আওয়ামী চক্র। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি ও অবৈধ বাণিজ্য চলছে এই বাজারকে ঘিরে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খলা ও ব্যবসায়ীদের চরম ভোগান্তি।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অন্যতম সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন আনু—যিনি তৎকালীন সরকারের যুবলীগ নেতা এবং জুলাই আন্দোলনে ছাত্র হত্যার নায়ক হিসেবে পরিচিত—তার বাহিনীর মাধ্যমে এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। আনোয়ার বর্তমানে আত্মগোপনে থাকলেও তার হয়ে বাজার পরিচালনা করছে ফাতেমা হক ফেরদৌসী , এয়ারপোর্ট বাবলু, ভুয়া ব্রিগেডিয়ার লুতফুর, রাব্বি রিয়াজ, রাকিব, আহাদ, কদমসহ আরও অনেকে। তাদের কারোই বাজার পরিচালনার কোনো বৈধ অনুমতি নেই।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আনোয়ার বাহিনী প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা উঠাচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ফলে কাঁচাবাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী, আড়তদার ও শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, বাজারের ১৭৭ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আনোয়ার হোসেন আনু প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চাঁদাবাজি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং: ১২৭৩/২০২৪ ইং, উত্তরা পশ্চিম থানা মামলা নং : ১৬০০, ১০৭/১১৭, ১/৫৩৪, পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র হত্যা মামলাসহ আরও প্রায় অর্ধ শতাধিক মামলা তার বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে।
অভিযোগে আরও জানা যায়, আনোয়ারের স্ত্রী ফাতেমা হক ফেরদৌস, রিয়াজ, বাবলুসহ আরও অনেকে এই চাঁদাবাজির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও তাদের দৌরাত্ম্য কমেনি; বরং প্রতিদিন নতুন করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিদিন চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছি। না দিলে দোকান থেকে মালপত্র বের করতে দেওয়া হয় না। মাঝে মাঝে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। বাজারের পরিবেশ দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে।”
তারা আরও জানান, চাঁদাবাজির কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হওয়ার মুখে পড়েছেন। বর্তমানে বাজার ঘিরে ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, “আমরা চাই দ্রুত এই চাঁদাবাজ চক্রকে গ্রেফতার করা হোক। বাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক প্রশাসন।”
তথ্য সংগ্রহকালে আরও জানা যায়, পূর্বে শতাধিক নিউজ চ্যানেল ও পত্রপত্রিকা বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। সকল জনসাধারণের পক্ষে তাদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে বৃহত্তর উত্তরা বিসমিল্লাহ পাইকারি কাঁচাবাজার সমবায় সমিতি লিমিটেড, যারা বাজারের সকল ব্যবসায়ীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বলে জানানো হয়।