ত্রিপুরায় ভয়াবহ বন্যা: বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দেওয়ায় পানির প্রবল ধাক্কা

অনলাইন ডেস্ক: ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েকদিন ধরে চলা ভারী বর্ষণে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে সেখানে অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

ডুম্বুর জলাধারের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে আসায় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে স্লুইস গেট খুলে দেয়। এর ফলে উজানের পানি ত্রিপুরার বিভিন্ন জনপদ ডুবিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

ত্রিপুরা টাইমস ও বোরোক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দেয়ার কারণে গোমতী ও সিপাহীজলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর ও কৃষিজমি পানিতে ভেসে গেছে। বিভিন্ন নদী হয়ে সেই পানি তীব্র গতিতে ভাটির দিকে আসছে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বুধবার (২১ আগস্ট) সাংবাদিকদের জানান, গোমতী জেলার ডুম্বুর জলাধারে প্রচুর পানি জমে যাওয়ায় বাঁধ ভেঙে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাই স্থানীয় এলাকাবাসীকে আগাম সতর্ক করে স্লুইস গেট খুলে বাড়তি পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে গোমতী ও সিপাহীজলা জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বোরোক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ বছর পর ত্রিপুরার ডুম্বুর জলাধারের স্লুইস গেট খুলতে হলো। ১৯৯৩ সালের ভারী বৃষ্টিপাতের পর বাঁধের স্লুইস গেট খোলা হয়েছিল, কিন্তু এবারের বন্যার পরিস্থিতি আরও মারাত্মক। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় আগে থেকেই স্লুইস গেট খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

ত্রিপুরার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের দক্ষিণ জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা অতীতের কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। অন্যান্য জেলাগুলোতেও প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এমন বৃষ্টি আরও দুই দিন ধরে চলতে পারে, যার ফলে নতুন করে অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।

এদিকে, ডুম্বুর জলাধারের পানি যেমন ভাটির দিকে আসছে, তেমনি ত্রিপুরার হাওড়া, ধলাই, মুহুরি, ও খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এবং খাগড়াছড়ি জেলার নিম্নাঞ্চলে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী জেলায় এ বন্যা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে দেখা দিয়েছে। উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম, ও ছাগলনাইয়ার রাস্তা-ঘাট এবং ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সদর উপজেলা ও সোনাগাজীর অনেক গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন নিহত এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন।

মুহুরী, কহুয়া, ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুইশোরও বেশি গ্রামের লাখো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন। বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করতে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো মাঠে নেমেছে। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী ও বিজিবি স্পিড বোট ও নৌকা নিয়ে অংশ নিচ্ছে।

অন্যদিকে, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের অনেক নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, এবং হবিগঞ্জের বিভিন্ন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য মনিটরিং সেল চালু করেছে। সারা দেশের বন্যাকবলিত এলাকায় যে কোনো সেবা পেতে ফায়ার সার্ভিসের হটলাইন ১০২ এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর ০২২২৩৩৫৫৫৫৫ চালু থাকবে। মনিটরিং সেলে সরাসরি যোগাযোগের জন্য ০১৭১৩০৩৮১৮১ নম্বরে ফোন করা যাবে। এছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেও ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *