“রাজশাহীতে সাপে কাটা বৃদ্ধিমূখী: র‌্যামেক এ চালু হতে যাচ্ছে দেশসেরা স্নেক-বাইট ওয়ার্ড”

ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট, রাজশাহী প্রতিনিধি: দেশব্যাপী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাপ কাটার (snake-bite) রোগীদের জন্য এক বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ১২ শয্যা বিশিষ্ট ওয়ার্ডে কেবল সাপে কাটা রোগীদের “তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত চিকিৎসা” দেওয়া হবে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী থাকলে চলতি মাসেই চালু করা হবে।

খুব সম্ভবত এটি হবে দেশের প্রথম কোনো সরকারি হাসপাতালে সাপে কাটার জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড। সাপ কাটার রোগীর সংখ্যা সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় এবং মৃত্যুহারও ধারণার চেয়েও বেশি হওয়ায় হাসপাতালের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাধারণ চিকিৎসামূলক ওয়ার্ড বা জরুরি বিভাগের পরিবর্তে এই আলাদা পরিকল্পনা অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই ওয়ার্ড চালু করা হবে হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সম্প্রসারিত অংশে। এখানে দায়িত্বে থাকবেন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, যিনি স্নেক বাইট (বিশেষ করে Russell’s viper) নিয়ে পিএইচডি করছেন ও গবেষণার শেষ পর্যায়ে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে আট জন নার্স বাছাই করা হয়েছে এবং চিকিৎসক-নার্সদের জন্য স্নেক বাইটের জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে।

হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাপ কাটা রোগীদের ভর্তি হয়েছিল ১ ০৬৭ জন। এর মধ্যে বিষধর সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০৬ এবং অন্যান্য সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা ৮০০। মারা গেছেন ৩১ জন—রাসেলস ভাইপার কামড়ে মারা গেছেন ১০, কেউটের কামড়ে ১৩ জন, গোখরা সাপে ৫ জন, অন্য ধরনের সাপে ৩ জন।

বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সহ গবেষণামূলক একাধিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার জন সাপে কাটার ঘটনায় মারা যায়।

সাপ কাটা সাধারণভাবে গ্রামীণ অঞ্চল ও রাতের বেলায় বেশি হয়—তাই সাপ কাটার ঝুঁকি কমাতে জনসচেতনতাও জরুরি।

র‌্যামেক-এর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, “সাপে কাটা রোগীদের এক হাসপাতালে সমন্বিত ওয়ার্ডে ভর্তি ও চিকিৎসা শুরু হলে মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমবে। ম্যালপ্র্যাকটিস-ইনফ্রাস্ট্রাকচারে আমরা বেশ পিছিয়ে ছিলাম।” তিনি আরও বলেন, মোটা অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা করা হয়েছে—এক ডোজের জন্য প্রায় ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়, এবং এক রোগীর ক্ষেত্রে একাধিক ডোজ লাগতে পারে—but এখানে রোগীরা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ওষুধ পাবেন।

তিনি পরামর্শ দিয়েছেন—রাতের বেলা অবশ্যই মশারি ব্যবহার, মাঠে কাজের সময় গামবুট–লাইট নিয়ে চলা, গর্তে হাত দেওয়া এড়িয়ে চলা ও ঘরের আশ-পাশ পরিষ্কার রাখা। কারণ, বিশেষ করে রাইত ও রাতের বেলায় সাপ বেশি সক্রিয় হয়।

হেলথ অ্যানালিস্টরা বলছেন, দেশে সাপে কাটা এক লুকিয়ে থাকা জনস্বাস্থ্য ইমার্জেন্সি—আবহাওয়া পরিবর্তন, বন্যপ্রাণীর আবাসন সংকট ও মানুষের বসতি-উদ্দীপন সব মিলিয়ে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

এ উদ্যোগ সফল হলে শুধু রাজশাহীতে নয়, সারাদেশে সাপে কাটার চিকিৎসার মডেল গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তবে সাফল্যের জন্য জরুরি হবে—সক্রিয় মনিটরিং, দ্রুত রোগীকরণ, সাপ-চিহ্নিতকরণ, জনসচেতনতা ও নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভেনম সরবরাহ।

এই সাপ কাটার ভয়াবহতা আজ শুধুই ‘বাড়ির ভেতর’ সীমাবদ্ধ নয়: এটি হতে পারে কালের প্রতিকূল পরিবর্তনের সঙ্গে মানব-প্রকৃতি সংঘর্ষের এক নতুন রূপ। সাপ কাটা প্রতিরোধে এখন সময় এসেছে পরিকল্পিত রূপ দিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com