এ.বি.এম.হাবিব : নওগাঁ জেলার বদলগাছী থানায় শর্মাপুর গ্রামে ২২ কেজি চাউল চুরির সন্দেহে মধ্যযুগীয় কায়দায় খুঁটির সাথে হাত-পা বেঁধে বেধরক ভাবে মারধর করেছে একই গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য টিপু সুলতান তার শালক সেনা সদস্য মনিরুজ্জামান ও মাসুদ রানা। এ অমানবিক নির্যাতন শেষে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাইলে,ভুক্তভোগীর শারীরিক অবস্থার দিকে দেখে, বদলগাছি থানার এস আই নুরে আলম সিদ্দিকী তাদেরকে থানায় নিতে অস্বীকৃতি জানালে, সাবেক সেনা সদস্য টিপু সুলতান সাইডে ডেকে নিয়ে কথাবার্তা বললে,পরবর্তীতে এস আই তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে, চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে যান। পরবর্তীতে বদলগাছি থানার ওসি তাদেরকে, বদলগাছি ইউনিয়নের খাদ্য গুদামের অপজিটে ২ মাস আগের কীটনাশক ঔষধের দোকানঘর চুরির মামলায় ইউসুব ও রাজু নামের অসহায় ২ ভুক্তভোগীকে চালান করেন। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুসে উঠেছে এলাবাসী এবং অভিযোগ করেছেন টিপু সুলতান, মনিরুজ্জামান, মাসুদ রানাসহ বদলগাছি থানা ওসির বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে একাধিক এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ১১ টার সময় দিনমজুর মো. আব্দুল মোত্তালেবের ছেলে ইউসুব শর্মাপুর গ্রামে রাজমিস্ত্রী কাজ করা অবস্থায়, এবং একই গ্রামে আব্দুল আলীমের ছেলে মো. রাজু হোসেনকে ঘুম থেকে কৌশলে ডেকে তুলে নিয়ে যায় একই গ্রামের মৃত ছবেদ আলীর ছেলে, সাবেক সেনা সদস্য মো. টিপু সুলতান। ডেকে নিয়ে সাবেক সেনা সদস্য টিপু,মাসুদ রানা ও মৃত. আহম্মদ আলীর ছেলে সেনা সদস্য মো. মনিরুজ্জামান চাল চুরির অপবাদ দিয়ে, মধ্যযুগীয় কায়দায় তাদেরকে হাত-পা খুটির সাথে বেঁধে রেখে ব্যাপক ভাবে মারধর করে এবং জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি মুলক ভিডিও নেয়। এলাকাবাসী জানায়, এই সাবেক সেনা সদস্য এলাকায় প্রচুর ক্ষমতা এবং দাপট দেখিয়ে সকলকে কুক্ষিগত করে রাখে এবং তার শালক বর্তমান সেনা সদস্য মনিরুজ্জামান এই দুইজনের দাপটে এলাকাবাসী সব সময় আতংকে থাকে। সাবেক সেনা সদস্য টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইউসুবের বাবা বলেন, চুরির অপবাদে তার ছেলেকে রাজমিস্ত্রী কাজ করা অবস্থায় কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে বেধরক মারধর করে থানা পুলিশ তুলে দেয়, পরবর্তীতে দুমাস আগের এক কীটনাশক দোকান চুরির মামলার চালান করে ফাঁসানো হয়েছে তার ছেলেকে। তাই তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্ত চান তিনি।
এবিষয়ে একাধীক এলাকাবাসী জানায়, আমারা গ্রামে থাকি পুলিশ প্রশাসন চাল চুরির অপবাদে অসহায় ছেলে দুটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কীটনাশক দোকান চুরির মামলা করে ফাঁসিয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, এরকম নির্মম নির্যাতন ও মারপিট তারা জীবনে কখনো দেখেনি। কোনদিন রাজু ও ইউসুবকে চুরির মত কোন ঘটনার সাথে তারা জড়িত ছিল না। তাই আমরা সঠিক তদন্ত চাচ্ছি এবং অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া অনুরোধ করেছেন প্রশাসনের কাছে।
এবিষয়ে টিপু সুলতানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি বলেন,তিনি হাজি মানুষ, তিনি কোনদিন মিথ্যা বলেন না, বলে জানান, কখনোই তিনি কোন মারপিট করেন নাই, এমনিতেই তিনি তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি ভিডিও ধারণ করেছেন এবং সেই মতাবেক, থানায় লিখিত অভিযোগ করে পুলিশে দিয়েছেন। তার মারপিটের ভিডিও গুলো সাংবাদিকদের কাছে আছে বলে জানালেও, তিনি পুরোটাই অস্বীকার করেন। তার চাউল চুরি হয়েছে, জিরাশাল ২৫ কেজি, কিন্তু অভিযুক্ত রাজু বিক্রয় করেছে মোটা চাউল স্বণা৫ দোকানে বিক্রয় করেছে তাহলে এ কিভাবে সন্ধেহের বসে, তাদেরকে ধরে এভাবে মারপি করলেন,এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,ঐ স্বণা৫ মোটা চাউলও ছিল আমার। পুলিশে দেওয়ার পর তাদেরকে ২ মাস আগের কিটনাশকের মামলায় দিলেন কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যার কাছে চাউল বিক্রয় করেছে, তার নাম রাব্বানী,তাকে থানায় ডেকে নিয়ে,ওসি সাহেব ৪ হাজার ৫০০শত টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ার পর,সবাইকে চলে যেতে বলেন। তিনি বার বার ওসি সাহেবকে চাউল চুরির মামলায় তাদেরকে চালান দিতে বললেও, ওসি সাহেব তার কথাতে গুরুত্ব দেয় নাই বলে জানান।
এস আই নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, চাল চুরির ঘটনায় তাদের থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। কীটনাশক দোকান চুরির মামলা দেওয়া হলো কেন,জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ওসি স্যারের সাথে কথা বলেন ভাই বলে ফোন কেটে দেন।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.আনিছুর রহমান এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন,চাউল চুরির ঘটনার বাদী, মামলা করতে অস্বীকৃতি জানালে,এবং কীটনাশক দোকান চুরির মামলার সন্ধেহ মুলক আসামি থাকায় আসামিদের সেই মামলায় চালান করা হয়েছে বলে জানান। এটা কি সঠিক করেছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,বাদীকে পাঠিয়ে দিন,তার মামলাও নেবো বলে, মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।