নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মিরপুর ঢাকা মেট্রো -১ সার্কেল বিআরটিএ অফিসের ২০৯ নম্বর কক্ষটি যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগের মূল কেন্দ্রে রয়েছেন ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের মালিকানা বদলি শাখার উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোসেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার কাছে সেবা প্রার্থীরা কার্যত জিম্মি বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু অফিসের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়, টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদপত্র এবং সামাজিক মাধ্যমেও তা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
অভিযোগ: ঘুষ ছাড়া ফাইল ধরেন না মনোয়ার
প্রাপ্ত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোসেন সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে এবং দালালদের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে সুকৌশলে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, টাকা ছাড়া তিনি কোনো ফাইল স্পর্শ করেন না। দালালদের ‘সিগন্যাল’ পেলেই নাকি ফাইলের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়।
সাধারণ সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ, মালিকানা বদলিসহ গাড়ির যেকোনো কাজ এবং অন্যান্য অফিসিয়াল কাজের জন্য নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা হয় দালালদের মাধ্যমে। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ফাইল আটকে রাখা ও হয়রানি করা এখানে যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
রাজনৈতিক প্রভাব ও বহাল তবিয়তে থাকা
আশ্চর্যের বিষয় হলো, বারবার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও মনোয়ার হোসেন এখনও বহাল তবিয়তে নিজ পদে রয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে তার নাম উঠে এলেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, মনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এই পদে টিকে আছেন। তার বিরুদ্ধে বিগত সরকারকে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে কাজ করা এবং ছাত্র-জনতা আন্দোলনের বিরোধিতারও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের আনুকূল্যেই তিনি চাকরিতে যোগদান করেন এবং এরপর থেকেই দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। তিনি তার নিয়োজিত দালালদের দিয়ে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযোগপত্র ও সম্পদের বিবরণ
জানা যায়, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা মো. খাইরুল কবির চলতি বছরের গত ২৫ সেপ্টেম্বর সড়ক জনপদ ও মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক জনপদ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার কাছে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই উল্লেখিত তথ্যগুলো পাওয়া গেছে।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, মনোয়ার হোসেন প্রতিদিন দালালের মাধ্যমে গ্রাহকদের হয়রানি করে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি অবৈধ গাড়ির কাগজপত্রও অর্থের বিনিময়ে বৈধ করে দিচ্ছেন।
মালিকানা বদলি: গাড়ির মালিকানা বদলির ক্ষেত্রে বর্তমানে উভয় পক্ষকে (ক্রেতা ও বিক্রেতা) হাজির থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, মনোয়ার হোসেন দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে এক পক্ষ হাজির না থাকলেও কাজ করিয়ে দিচ্ছেন।
অঢেল সম্পদের মালিক: অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মনোয়ার হোসেন নিজ জেলা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পূর্ব শিবনগরে নামে-বেনামে অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তিনি নিজ জেলা শহরে চতুর্থ তলার একটি ভবন নির্মাণ করছেন এবং ঢাকার শহরে ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রয় করেছেন। মনোয়ার হোসেন ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার পূর্ব শিবনগরের আব্দুস সোবহানের ছেলে।
ভুক্তভোগীদের দাবি
বিআরটিএ অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না।” বারবার অভিযোগের পরেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সেটাই
এখন বড় প্রশ্ন।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত করে মনোয়ার হোসেনসহ এই দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। মিরপুর বিআরটিএ অফিসের দুর্নীতি আজ আর গোপন কোনো বিষয় নয়। এই অফিস দুর্নীতি ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটমুক্ত কবে হবে? কবে সাধারণ মানুষ হয়রানি ছাড়া প্রকৃত সেবা পাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিআরটিএ-তে আসা গ্রাহকরা। আগামী পর্বে এই বিষয়ে বিস্তারিত আরো তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। (পর্ব – ২)