গাজীপুরে ৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা ; ‎বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়ে মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি : গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় অবস্থিত  ঐতিহ্যবাহী চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অ্যাডহক কমিটি নিয়ে মামলার ঘটনায় ৮ মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। বেতন-ভাতাদি না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির ৮৬ শিক্ষক-কর্মচারী চরম বিপাকে পড়েছেন। অর্থের অভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

‎একাধিক সুত্রে ও ভুক্তভোগী শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৪ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনায়ন দেয়া হয় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলমকে। পরে গত ১৭ মার্চ মহানগরীর বাসন থানা বিএনপির সাবেক (সদ্য বহিষ্কৃত) সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ডা. মাজহারুল আলমের সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা নেই মর্মে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অ্যাডহক কমিটির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং পরবর্তী শুনানির দিন ২৪ জুন ২০২৫ ইং ধার্য করেন।

‎পূর্ব নির্ধারিত ২৪ জুন রিট পিটিশন শুনানি শেষে হাইকোর্ট পুনরায় ৬ মাসের জন্য কমিটির ওপর স্থগিতাদেশ দেন।

‎এদিকে গঠিত অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ গত ৯ আগস্টে শেষ হলেও আদালত কর্তৃক স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে আগামী ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে সর্বমোট আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এবং ৮৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। অ্যাডহক কমিটির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের গত ছয় মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।

‎এবিষয়ে জানতে চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া  এ্যাডহক কমিটির সাবেক সভাপতি বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম মুঠোফোনে আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন সে এটা কেন করেছেন, কি জন্য করেছেন, কাদের স্বার্থে করেছেন তা আমার জানা নাই। তবে তিনি যেটা করেছেন সেটা সম্পূর্ণ ভুল করেছেন। আমি যদি জানতাম তারা বিদ্যালয়ের সভাপতির পদের জন্য করেছেন তা হলে আমি আরো আগেই এখানে থেকে সরে আসতাম।

‎তিনি আরো বলেন আগস্টে কমিটির মেয়াদ শেষ যাবে জেনেও সে কি করে ছয় মাসের (২৩ ডিসেম্বর২০২৫) নিষেধাজ্ঞা আরোপ করান? তারা দেশের সর্বোচ্চ আদালত কে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে এই আদেশ করিয়েছেন।  যা বিদ্যালয়ের জন্য ক্ষতিকারক।  এতে করে বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন, যার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত।  শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সমস্যা হয়।  এমন ছোট মনের মানুষের রাজনীতি করা ঠিক না। যত দ্রুত সম্ভব এই নিষেধাজ্ঞা তুলে বিদ্যালয়ের  উন্নয়নে উৎসাহিত করবেন বলে আসি আশা করি। এই বিদ্যালয়টি আমাদের সকলের গৌরব, এই গৌরব যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে আমাদের সকলের খেয়াল রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।

‎নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা বলেন চলতি মাসসহ ৮ মাস ধরে বেতন বন্ধ করে রেখেছেন আমাদের, আমরা বর্তমান পরিবারপরিজন নিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীনে আছি, যিনি মহামান্য হাইকোর্ট থেকে স্থগিত আদেশ করিয়েছেন তিনি যে কি বুঝে কেন করেছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আগষ্ট মাসে এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ জেনেও তিনি ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আদেশ করান। এতে করে আমাদের বেতন-ভাতা সব বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। তিনি কি করে এমন একটি কাজ করলেন? বিদ্যালয়ের ৮৬ জন শিক্ষক কর্মচারীর দাবি দ্রুত এই আদেশ নিষ্পত্তি করে আমাদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

‎এ বিষয়ে চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ও অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমিন জানান, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। অচিরেই এই অচল অবস্থা নিরসনে তিনি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com