নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটি ( বিআরটিএ) এর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে সহকারি পরিচালক ও কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা জেঁকে বসেছে অপকর্ম ও দুর্নীতিতে। যানবাহনের রেজিষ্ট্রেশন, ফিটনেস,ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন দালালদের মাধ্যমে। ওই সব দালালরা বিআরটিএ আগত গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিন ) মো. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মোটরযান পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, মোটরযান পরিদর্শক মো. সাইফুল কবির , সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ হেমায়েত হোসাইন, উচ্চমান সহকারী ও অফিস সহায়ক কর্মচারীরা ওই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে বলে একাধিক গ্রাহকদের অভিযোগে জানা গেছে। সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান চাকুরি শুরু থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন । তিনি ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাটে মালিক, এছাড়াও নিজ গ্রামের এলাকায় নামে বেনাম অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অভিযোগে আরো জানা গেছে, মাহবুবুর রহমানের চাকুরির শুরুটাই ছিল ছয় নয় করে। কাগজপত্র করো ঠিক ছিল না। পরে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কাগজপত্র ঠিক করেন। এভাবেই সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরাও অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হয়ে কিভাবে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএতে বহাল তুরিয়তে রয়েছে । ওইসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা দালালের মাধ্যমে আগত গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। দালাল (জাকির হোসেন ছদ্মনাম) মাধ্যমে জানা যায়, অফিসারদের মাধ্যমে আমরা কাজ করে থাকি । নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ তে আগত গ্রাহকদেরকে সুকৌশলে বিভিন্নভাবে কাগজপত্রের গড় মিল দেখিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্তিকর সৃষ্টি করি। এক পর্যায়ে গ্রাহকরা নিজেরাই চেষ্টা করেও কোন কাজ হয় না। পরে আমাদের কাছেই আসতে হয় আমরা এই সুযোগে অফিসারদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেই। এতে করে অফিসাররা লাভবান হয় এবং আমরাও লাভবান হই। অফিসাররা সিন্ডিকেট করে অবৈধভাবে গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা খাইলে কি সমস্যা ! এখানে যে কোন প্রশাসনের সদস্যদের কথাই বলেন সবাই অর্থের কাছে হেরে যান সঠিক কোন কিছুর বিচার করতে পারেন না। এভাবেই ওই সিন্ডিকেটের মূল হোতা সহ সকল সদস্যরা অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তাদেরকে দেখার কেউ নেই ! তারা কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন অবৈধভাবে। আর আমরা দিনে যাই পাই তাই দিয়ে চলার চেষ্টা করি। তাদের কারণে আজ গ্রাহক সেবাপ্রার্থীরা সেবা পেতে পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে। এদিকে বিআরটিএ সদর দপ্তর থেকে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ’র কার্যালয়ে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এবং দালালদের উৎপাত বন্ধে নোটিশ করলেও উৎপাত কমেনি। ভুক্তভোগী গ্রাহক আসাদুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, বিআরটিএ কার্যালয়ে দায়িত্বরত অফিস কর্তা ব্যক্তিদের আশকারায় দালালদের দৌরাত্ব বেড়েছে । বিআরটিএ কার্যালয়ে এসব অনিয়ম– দুর্নীতি বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কারো বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করেন নাই এমনকি তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করাও হয়নি বিআরটিএ সদর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে । অনিয়ম, ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়া হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ । ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়মের প্রমাণও পেয়েছে। কিন্তু ওই সব সিন্ডিকেটের মূল হোতা সহ সদস্যরা নিজেদেরকে সাধু বলে দুদকের কাছে তুলে ধরেছেন । সহকারি পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান তাদেরকে ছয় নয় করে বুঝিয়ে নিজেকে সাধু ভাবেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, তাদেরকে বিদায় করতে হলে কি করতে হয়েছে তা আপনারাই বুঝেনিয়েন ? ঢাকা বিভাগীয় বিআরটিএ এর কার্যালয় এবং বিআরটিএ’র সদর দপ্তরে পৃথকভাবে ওইসব সিন্ডিকেট এবং দালালদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে একাধিক অভিযোগে জানা গেছে। ঢাকা বিভাগীয় বিআরটিএ কার্যালয় এবং বিআরটিএ’র সদর দপ্তর থেকে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী কোন তথ্য চেয়ে আবেদন করলে ওইসব বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সার্বিক বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিআরটিএর অফিসেগুলোতে সেবা পেতে যে হয়রানি হতে হয় তার কোন সুরাহা কর্তৃপক্ষ করেন না। যারা ঘুষ বাণিজ্য,দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করেন তাদের বলার মতো কোন শাস্তি হয়না। ফলে এ সেবাখাতটি দিন দিন অনিয়মের খাতে পরিনত হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। বিআরটিএর দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচাল বলেন, গত ৭ মে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদে ঘুষ লেনদেনসহ দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে দেশের ৩৫টি বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটি )কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগেও বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের অভিযোগে দুদক অ়ভিযান পরিচালনা করেছে। তিনি আরও বলেন, শুধু আমরা অভিযান চালিয়ে গেলেই হবে না । কিন্তু বিআরটিএর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দালালদের বাইরে থাকতে হবে এবং অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করার থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে যদি বিআরটিএ গ্রাহকরা অন্তত কিছুটা সেবা পাবে । এইসব ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কথা বলতে রাজি হননি প্রথমে। পরে অনেক কথা বলার পরে একপর্যায়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে কোন দালাল নেই। এমনকি ওইসব কাজে আমি জড়িত নয় । পর্ব –১, পরের পর্বে চোখ রাখুন আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।