‘নতুন কুঁড়ি’ নতুন প্রজন্মের প্রতিভার বিকাশ ঘটাবে: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

বাসস: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনে শুরু হতে যাওয়া ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ করে দেওয়াই সরকারের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে (১৯৭৬ সালে) এই অনুষ্ঠানটি চালু হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সরকার রাজনৈতিক কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। বর্তমান সরকার রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে দেশের শিশু-কিশোর ও তরুণদের প্রতিভা বিকাশে সুযোগ তৈরি করছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিল্পী, গায়ক ও সংস্কৃতিকর্মী তৈরি হবে যারা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

আজ রোববার শিশু-কিশোরদের প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি -২০২৫’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রায় দুই দশক পর আবারও বাংলাদেশ টেলিভিশনে শুরু হতে যাচ্ছে শিশু-কিশোরদের প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’। 

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছি এবং যারা এ গণ-অভ্যুত্থানে কাজ করেছি, তাদের সবারই আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন করে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করা, নতুনভাবে তার সূচনা করা- এই ছিল আমাদের অঙ্গীকার।’

তিনি জানান, অনুষ্ঠানের কাঠামোয় তেমন পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের মতোই গান, নৃত্য, বক্তৃতা, উপস্থাপনা ও গল্প বলাসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। পুরোনো থিম সং -কে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে এবং প্রতি বছর নতুন থিম সং প্রকাশ করা হবে।

মাহফুজ আলম বলেন, মেধা ভিত্তিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তৃণমূল থেকে প্রতিভা বাছাই করা হবে। কাউকে বিশেষভাবে উপরে ওঠানো বা সরানোর কোনো উদ্দেশ্য সরকারের নেই। যে প্রতিভাবান এবং জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্য তাকেই সামনে আনা হবে। বিচার প্রক্রিয়ায় বিভাজন কমাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নিরপেক্ষতার বাইরে গিয়ে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ১৫ থেকে ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গন একপেশে হয়ে পড়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, গায়ক-অভিনেতাদের সঙ্গে এক ধরনের ক্লায়েন্ট-প্যাট্রন সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছিল। বর্তমান সরকার সে প্রথা ভেঙে দিয়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন প্রজন্মকে সামনে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে তিনি চলমান ফিল্ম সিটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, ১০৪ একর জমিতে পূর্ণাঙ্গ একটি ফিল্ম সিটি গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তনের কারিগর আখ্যায়িত করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে যিনি সম্মানের যোগ্য, তাঁকে অবশ্যই সম্মান দিতে হবে। অতীতে রাজনৈতিক কারণে তাঁর নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল, কিন্তু নতুন বাংলাদেশে সবাইকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হবে।

আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত আয়োজন সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বর নাগাদ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবানরা এখান থেকে উঠে এসে জাতীয় সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা শিশুদের সঙ্গে ‘নতুন কুঁড়ি’র গান শোনেন এবং কণ্ঠ মেলান। পরে তিনি পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এবং কেক কেটে প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমও শুরু হয়।

১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘নতুন কুঁড়ি’র যাত্রা শুরু হয়। দেশের শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশ এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একসময় অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৫ সালে পুনরায় যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com